ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় “ব্যাপক বিমান হামলা” চালানোর কথা জানিয়েছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, এ হামলায় অন্তত ৩৩০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা হামাসের তথাকথিত “সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু”গুলোর ওপর হামলা চালাচ্ছে।
গাজা উপত্যকার হামাসের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও উপ-অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী মাহমুদ আবু ওয়াফা একটি হামলায় নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরুর পর এটিই গাজায় ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বিমান হামলা। গাজায় যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর এই হামলা চালানো হয়েছে।
চলছে পবিত্র রমজান মাস। সাক্ষীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, গাজায় ভোররাতের খাবার (সেহরি) খাওয়ার সময় হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এরপর ২০টিরও বেশি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজা সিটি, রাফাহ এবং খান ইউনিসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ মঙ্গলবার সকালে এই হামলার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “হামাস আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দিতে বারবার অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এছাড়াও, মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফ এবং মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে পাওয়া সব প্রস্তাব তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।” বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ইসরায়েল এখন থেকে হামাসের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে।”
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যানি ড্যানন হামাসকে সতর্ক করে বলেছেন, “আমরা আমাদের শত্রুদের প্রতি কোনো রকম দয়া দেখাব না।” হামাস ইসরায়েলের এই হামলাকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গের চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছে এবং বলেছে, ইসরায়েল গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের “অজানা ভাগ্যের” দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তবে হামাস এখনও যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দেয়নি। তারা মধ্যস্থতাকারী এবং জাতিসংঘকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে ইসরায়েল এই হামলার আগে জানিয়েছে বলে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র ফক্স নিউজকে জানিয়েছেন। ১ মার্চ অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর আলোচকরা এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামাসের কাছে থাকা জিম্মি এবং ইসরায়েলের কাছে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময় করে যুদ্ধবিরতি এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে আলোচনায় জড়িত এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, উইটকফের প্রস্তাবিত চুক্তির মূল দিকগুলো নিয়ে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে মতবিরোধ ছিল।
ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে সর্বশেষ যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। ওই দিন হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে ১,২০০ এর বেশি মানুষকে হত্যা করে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এছাড়াও ২৫১ জনকে জিম্মি করে নেয়া হয়। এই হামলার জবাবে ইসরায়েল যে সামরিক অভিযান শুরু করে, তাতে এখন পর্যন্ত ৪৮,৫২০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থাও এই সংখ্যা ব্যবহার করে থাকে। গাজার ২১ লাখ মানুষের বেশিরভাগই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
গাজার প্রায় ৭০% ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা, পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের অভাব তীব্র হয়ে উঠেছে।