বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর সর্বশেষ যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা দেশটির জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে অর্থনৈতিক সংস্থা জেপি মর্গ্যান। সংস্থাটি বলছে, এর ফলে আগে থেকেই চাপে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চলতি বছর মন্দার মুখোমুখি হতে পারে।
একইসঙ্গে দেশটিতে বেকারত্বের পরিমাণ বেড়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। জেপি মর্গ্যান বলছে, যদি যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা হয়, সেক্ষেত্রে বিশ্ব অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়বে। এক্ষেত্রে সারা বিশ্বে মন্দার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ হবে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য হিল শুক্রবার (৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
আমেরিকান শিল্পের ‘পুনর্জন্ম’ এবং আমেরিকাকে ‘আবার সম্পদশালী’ করার ইচ্ছা জানিয়ে গত বুধবার (২ এপ্রিল) দেড় শতাধিক দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ৯ এপ্রিল থেকে এই বর্ধিত শুল্ক কার্যকর করা হবে। তবে কোনো দেশ যদি এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করতে চায়, সে পথও খোলা আছে বলে জানান তিনি।
সর্বশেষে শুল্ক আরোপের পর বৈশ্বিক বাজারে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। আর তাতেই বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ ধনী এক দিনে মোট ২০ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের সম্পদ খুইয়েছেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্পের এই শুল্ক সংক্রান্ত ঘোষণার পরেই দেশটির শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। ২০২০ সালের মার্চের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে পৌঁছেছে।
জেপি মর্গ্যানের প্রধান অর্থনীতিবিদ মাইকেল ফেরোলি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, চলতি বছরের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) ‘শুল্কের চাপে’ সঙ্কুচিত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি হলে বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গে এ প্রসঙ্গে ফেরোলির বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, গত বছর আমাদের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি বছরে আমরা ০ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি আশা করছি না, যা আগের বছরের তুলনায় বেশ খানিকটা কম। এ অবস্থার মধ্যে শুল্কের চাপে আমাদের জিডিপি সঙ্কুচিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।
শুল্ক আরোপের ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির পরিমাণ অনেক কম হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞেরা। তাদের পূর্বাভাস, অন্তত ২০ শতাংশ আমদানি কমতে পারে। সার্বিকভাবে মার্কিন অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের যেসব দেশ থেকে নিয়মিত পণ্য কিনে থাকে, সেসব দেশের প্রায় সবাই দেশটিতে রফতানি করা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে পোশাক থেকে শুরু করে কফি—সবকিছুতেই বাড়তি অর্থ গুনতে হবে যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন ইতোমধ্যে মার্কিন পণ্যের ওপরে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। আরও অনেক দেশও একই পথ অনুসরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবার কিছু দেশ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টার কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তেমনটি বলেছেন। শনিবার (০৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তিনি এ নিয়ে একটি জরুরি বৈঠকও ডেকেছেন।
এদিকে ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর দেশটির শেয়ার বাজারে যে ধস নেমেছে তার একটি চিত্র তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। প্রতিবেদনগুলোতে দেখা যায়, শুক্রবার (৪ এপ্রিল) ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল গড়ে ২ হাজার ২৩১ পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ পতন দেখেছে। দ্য এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকে ৬ শতাংশ কমেছে এবং নাসডাক সূচক একই দিনে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে।
দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের ঘোষণার পর বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ ধনী এক দিনে মোট ২০ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের সম্পদ খুইয়েছেন। এর মধ্যে মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ১ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার খুইয়েছেন, যা তার মোট সম্পদের ৯ শতাংশ। বৃহস্পতিবার অ্যামাজনের শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ পড়ে যায়। ফলে এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বেজোস তাঁর ব্যক্তিগত মোট সম্পদ থেকে ১ হাজার ৫৯০ কোটি ডলার খোয়ান। বৃহস্পতিবার টেসলা সিইও ইলন মাস্কের সম্পদ কমেছে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার।