মেলবোর্ন, ৯ এপ্রিল- ২০২৫ সালের ফেডারেল নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত প্রথম আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী বিতর্কে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবেনিজকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। পশ্চিম সিডনির স্কাই নিউজ এবং দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই বিতর্কে উপস্থিত ছিলেন ১০০ জন অনির্ধারিত ভোটার, যাঁরা সরাসরি দুই প্রধান নেতার কাছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করে তাদের অবস্থান জানতে চান।
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু: জীবনযাত্রার ব্যয়
এই নির্বাচনী বিতর্কে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় ছিলো বিতর্কের প্রধান আলোচ্য বিষয়। বিরোধীদলীয় নেতা পিটার ডাটন প্রতিশ্রুতি দেন যে, কোয়ালিশন সরকার গঠন করলে প্রথম ১২ মাসের জন্য জ্বালানি শুল্ক ৫০ শতাংশ হ্রাস করা হবে। তিনি জানান, এক বছর পরে এই নীতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী অ্যালবেনিজ এই প্রস্তাবকে স্বল্পমেয়াদী ও অস্থায়ী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এটি টেকসই সমাধান নয়। তিনি কোয়ালিশনের প্রস্তাবিত ৬০০ বিলিয়ন ডলারের পারমাণবিক শক্তি প্রকল্পের ব্যয় উল্লেখ করে সতর্ক করেন যে, এই ধরনের ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে বাজেট ছাঁটাই করা হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমাদের সরকার ইতিমধ্যে পরপর দুইবার বাজেট উদ্বৃত্ত প্রদান করেছে। আমরা যখন প্রয়োজন তখন সহায়তা প্রদান করেছি, তাও আবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে। এখনই ব্যয় সংকোচনের সময় নয়, বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীল রক্ষার সময়।”
স্বাস্থ্যসেবা: মেডিকেয়ার ও নাগরিক ব্যয়
জিপি দেখাতে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে এক দর্শক প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী অ্যালবেনিজ তাঁর মেডিকেয়ার কার্ড প্রদর্শন করে বলেন, “এই কার্ডটিই হওয়া উচিত অস্ট্রেলীয়দের একমাত্র চাহিদা।” অপরদিকে ডাটন উক্ত দর্শককে প্রশ্ন করেন, তাঁকে কি ক্রেডিট কার্ডও ব্যবহার করতে হয়? দর্শক ‘হ্যাঁ’ বললে তিনি বর্তমান সরকারের অধীনে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
অভিবাসন ও বিদেশি বিনিয়োগ
অভিবাসন প্রসঙ্গে ডাটন বলেন, “অভিবাসীরা অস্ট্রেলিয়াকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছেন।” তবে তিনি একটি “সুসংগঠিত ও ভারসাম্যপূর্ণ অভিবাসন ব্যবস্থা” গড়ে তোলার গুরুত্বারোপ করেন। বিদেশি সম্পত্তি ক্রয় সংক্রান্ত প্রশ্নে ডাটন কোয়ালিশনের বিদেশি ক্রেতাদের নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব তুলে ধরেন। অ্যালবেনিজ এর জবাবে বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞা ইতিমধ্যেই কার্যকর রয়েছে।”
জলবায়ু পরিবর্তন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি
সৌরশক্তি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে অ্যালবেনিজ জানান, লেবার সরকার ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপনকারীদের জন্য গৃহস্থালী ব্যাটারিতে ভর্তুকি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। ডাটন এই পরিকল্পনাকে উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের জন্য একটি ভর্তুকি হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, কোয়ালিশন সৌরশক্তির পক্ষে থাকলেও এই ধরনের নীতি বৈষম্যমূলক।
কর নীতি ও কর্মপরিবেশ
কর হ্রাস সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যালবেনিজ বলেন, লেবার পুনর্নির্বাচিত হলে নিম্নতম কর হার এক শতাংশ কমানো হবে। অপরদিকে, ডাটন জানান, সরকারি কর্মীদের অফিসে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা থেকে তারা পিছিয়ে এসেছেন, যা তিনি লেবার পার্টির “ভয়ভীতির প্রচারণা”র ফল বলে মন্তব্য করেন।
ভোটারদের রায়, কে জিতলেন?
বিতর্ক শেষে ১০০ জন অনির্ধারিত ভোটারের মধ্যে ৪৪ জন অ্যালবেনিজকে বিজয়ী ঘোষণা করেন, ৩৫ জন ডাটনের পক্ষে অবস্থান নেন এবং ২১ জন অনির্ধারিত থেকে যান। বিতর্কটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এবং দুই নেতাই তুলনামূলকভাবে সৌজন্যপূর্ণ ছিলেন। বিতর্কে উত্থাপিত বেশিরভাগ বক্তব্য ইতিপূর্বে প্রচার অভিযানে ব্যবহৃত হয়েছে।
ডাটন বলেন, “অস্ট্রেলিয়া বর্তমানে এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। কোয়ালিশন সরকার সর্বদা দায়িত্বশীলভাবে অর্থনীতি পরিচালনা করে থাকে। আমরা অস্ট্রেলিয়ার পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত।”
অন্যদিকে, অ্যালবেনিজ আবারও সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠনের বিষয়ে আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন, “এই অনিশ্চিত সময়ে পূর্বের মতো কাটা-ছাঁটাসহক নীতিতে ফিরে যাওয়ার সময় নয়।” তিনি কোয়ালিশনের অতীতের বাজেট কাটছাঁট এবং নীতির অস্থিতিশীলতার প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, “যারা এখন নির্বাচনের আগেই সিদ্ধান্ত বদলায়, নির্বাচনের পর তাদের উপর কীভাবে আস্থা রাখা যায়?”
পরবর্তী বিতর্ক
নির্বাচন বিতর্কটি ছিল দুই নেতার মধ্যে নির্ধারিত দুটি বিতর্কের প্রথমটি। দ্বিতীয় বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হবে ১৬ এপ্রিল, বিতর্কটি এবিসি-তে সম্প্রচারিত হবে।