এবিসি এর ডগ ডিংওয়াল এবং প্যাট্রিক মার্টিনের প্রতিবেদন অবলম্বনে
মেলবোর্ন ১২ এপ্রিল
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার চলমান শুল্কযুদ্ধের কারণে চীনে তৈরি অনেক পণ্য সস্তায় পৌঁছাতে পারে অস্ট্রেলিয়ান ভোক্তাদের হাতে।
যেসব গাড়ি, মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক পণ্য আগে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির জন্য তৈরি হতো, সেগুলো এখন অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় দাম কমতে পারে। তবে সতর্কতা রয়েছে, এই বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যদি বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়, তাহলে তা চীনে অস্ট্রেলিয়ার মূল রপ্তানি পণ্যগুলোর চাহিদা হ্রাস করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন, যার ফলে চীনা পণ্যগুলো আমেরিকান বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না — আর এর সুবিধা পেতে পারেন অস্ট্রেলিয়ানরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব ইলেকট্রনিক, যন্ত্রপাতি, খেলনা ও অন্যান্য পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে তৈরি হচ্ছিল, এখন তাদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে। চীনা রপ্তানিকারকরা যদি মার্কিন ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে যায়, তাহলে অস্ট্রেলিয়ান বাজার হতে পারে পরবর্তী গন্তব্য।
চীন ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। অন্যদিকে, আমেরিকায় চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বলবৎ হয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই প্রথম ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, “একটি বাণিজ্য যুদ্ধে কারও কোনও লাভ নেই”
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই প্রথম ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, “একটি বাণিজ্য যুদ্ধে কারও কোনও লাভ নেই।”
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, ট্রাম্প চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি হওয়ার ব্যাপারে “আশাবাদী”। তিনি বলেন, “চীন যদি পাল্টা ব্যবস্থা নিতে থাকে, তবে তা চীনের জন্য ভালো হবে না।”
ট্রাম্প সাম্প্রতিক এক ঘোষণায় বলেছেন, চীন ব্যতীত অন্য সব দেশের জন্য ৯০ দিনের জন্য ‘পারস্পরিক শুল্ক’ স্থগিত থাকবে।
স্বাধীন অর্থনীতিবিদ সল এসলেক বলেন, চীনা নির্মাতাদের সামনে দুটি পথ খোলা — উৎপাদন কমানো বা যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য বাজার খোঁজা। তিনি বলেন, উচ্চমানের ইলেকট্রনিকস, গাড়ি ও ফ্যাশন পণ্য অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতায় আসে না।
“অস্ট্রেলিয়ান সরকার চীনা পণ্য সস্তায় আমদানিতে বাধা দিলে কোনও যৌক্তিকতা থাকবে না,” — বলেন এসলেক।
“এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পেতে পারে এবং সুদের হারও কমার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। অর্থাৎ, এটি মোটের ওপর ইতিবাচক।”
তিনি আরও বলেন, “উদাহরণস্বরূপ, যদি চীনে তৈরি গাড়ি, মোবাইল ফোন, খেলনা ও পোশাক সস্তায় পাওয়া যায়, তবে সেটি আমাদের জন্য উপকারী হবে।”
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন বিশেষজ্ঞ লিসা টুহে বলেন, চীনা পণ্যের দাম কতটা কমবে তা নির্ভর করবে মার্কিন ভোক্তাদের উপর। যদি তারা উচ্চমূল্য দিতে না চায়, তবে চীনের পণ্য অস্ট্রেলিয়ায় সস্তায় বিক্রি হবে, তবে তা পণ্যভেদে ভিন্ন হতে পারে।
তিনি বলেন, ১২৫ শতাংশ শুল্কের কারণে চীনে মার্কিন পণ্যের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমবে এবং এতে অস্ট্রেলিয়ান কৃষিপণ্য যেমন গরুর মাংস, বার্লি, সিফুড ও ওয়াইনের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, প্রতিবার চীন বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সয়াবিন আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। কিন্তু উচ্চ শুল্কের কারণে সেই বাজার এখন অস্ট্রেলিয়ার জন্য উন্মুক্ত হতে পারে।
তবে কিছু পণ্য যেমন গাড়ি, সহজে অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি সম্ভব নয় কারণ নিরাপত্তা মান ও ভোক্তা পছন্দে পার্থক্য আছে।
অস্ট্রেলিয়ার ইস্পাত শিল্প সতর্ক অবস্থানে
সল এসলেক বলেন, চীন যদি সস্তা ইস্পাত রপ্তানি শুরু করে, তাহলে অস্ট্রেলিয়ার ইস্পাত শিল্প চাপে পড়তে পারে এবং সরকারকে অ্যান্টি-ডাম্পিং আইন কার্যকর করার জন্য চাপ দিতে পারে।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ভ্লাদিমির ত্যাজেলনিকো বলেন, “চীনা ইস্পাত কম দামে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করলে অস্ট্রেলিয়ার ইস্পাত শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।” তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অনিশ্চয়তা — যা বিনিয়োগ, ব্যবসা ও বাণিজ্যের জন্য ভালো নয়।”
বিশ্বজুড়ে তৎপরতা
শুল্কযুদ্ধের জেরে অনেক দেশই তাদের কৌশল পুনর্বিবেচনা করছে। চীন সম্প্রতি স্পেনের সঙ্গে দুটি কৃষি চুক্তি করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নেরও চেষ্টা করছে তারা।
চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ঊর্ধ্বতন অর্থ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা এই সপ্তাহে আলোচনায় বসেন শুল্ক যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে।
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, ৭৫টিরও বেশি দেশ শুল্ক নিয়ে আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছে। ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান প্রাথমিকভাবে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে বলে জানা গেছে।