মেলবোর্ন, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ — আগামী নির্বাচনে পুনঃনির্বাচিত হলে, অস্ট্রেলিয়ার সমস্ত প্রথমবারের বাড়ি ক্রেতাদের জন্য মাত্র ৫ শতাংশ ডিপোজিট দিয়ে বাড়ি কেনার সুযোগ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। এই স্কিমের অধীনে, ক্রেতাদের আর লেন্ডার্স মর্টগেজ ইনস্যুরেন্স (LMI) দিতে হবে না।
আজ সকালে আলবানিজ তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করে এই খবরটি “BREAKING: 5% deposits for all first home buyers under Labor” শিরোনামে প্রকাশ করেন। এ খবরটি ইতিমধ্যেই ABC সহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
প্রস্তাবিত এই স্কিমটি বর্তমান আয়ের ভিত্তিতে সীমাবদ্ধ একটি কর্মসূচিকে সম্প্রসারিত করে সকলের জন্য উন্মুক্ত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যখন একজন তরুণ ৫% জমা দিতে পারবে, তখন আমাদের লেবার সরকার ব্যাংকের সঙ্গে তাদের ঋণের বাকি অংশের নিশ্চয়তা দেবে। এতে তারা বাড়ি দ্রুত কিনতে পারবে, এবং LMI-এর অতিরিক্ত খরচ থেকে রেহাই পাবে।”
প্রথমবারের ক্রেতাদের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার বাজেট, ১ লক্ষ নতুন বাড়ি
এই ঘোষণার সঙ্গে আরও একটি বড় প্রতিশ্রুতি এসেছে — সরকার ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ২০২৬-২৭ সাল থেকে প্রথমবারের ক্রেতাদের জন্য এক লক্ষ নতুন বাড়ি নির্মাণ করবে। এসব বাড়ির নির্মাণ কাজ রাজ্য সরকার, ডেভেলপার এবং কমিউনিটি হাউজিং সংস্থাগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত হবে।
গৃহায়ণমন্ত্রী ক্লেয়ার ও’নেইল ABC-কে বলেন, “এই সংস্কার উদ্যোগটি জাতীয়ভাবে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেবে। আমাদের প্রথম মেয়াদে আমরা ভিত্তি তৈরি করেছি, এবার আমরা আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই।”
মূল্যসীমা বৃদ্ধি ও জাতীয় স্তরে প্রসার উদাহরণস্বরূপ, সিডনির একজন ক্রেতা ১৫ লক্ষ ডলারের বাড়ি মাত্র ৭৫,০০০ ডলার জমা দিয়ে কিনতে পারবেন। কুইন্সল্যান্ডের একজন ব্যক্তি ৮.৫ লক্ষ ডলারের বাড়ি ৪২,৫০০ ডলার জমা দিয়ে কিনতে পারবেন।
নতুন পরিকল্পনায় বাড়ির মূল্যের সীমাও বাড়ানো হচ্ছে যাতে সিডনি ও মেলবোর্নের মত শহরগুলোর উচ্চ দামের বাজারে আরও মানুষ উপকৃত হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, সিডনির একজন ক্রেতা ১৫ লক্ষ ডলারের বাড়ি মাত্র ৭৫,০০০ ডলার জমা দিয়ে কিনতে পারবেন। কুইন্সল্যান্ডের একজন ব্যক্তি ৮.৫ লক্ষ ডলারের বাড়ি ৪২,৫০০ ডলার জমা দিয়ে কিনতে পারবেন।
আঞ্চলিক শহরগুলোতে রাজ্য রাজধানীর মূল্যের সীমা প্রযোজ্য হবে, যেমন নিউক্যাসলেও সিডনির মত ১৫ লক্ষ ডলারের সীমা থাকবে। তবে অন্যান্য আঞ্চলিক এলাকার জন্য ভিন্ন সীমা নির্ধারিত হবে, যা রাজ্য বা অঞ্চলভেদে গড় বাজার মূল্যের উপর নির্ভরশীল।
বর্তমানে আয়ভিত্তিক স্কিমটি প্রতি বছর ৫০,০০০ মানুষ ব্যবহার করেন, কিন্তু সরকার আশা করছে যে এই সংস্কারের ফলে এই সংখ্যা বেড়ে বছরে প্রায় ৮০,০০০ হবে।
এই নতুন পরিকল্পনার ফলে সরকারের আবাসন খাতে মোট বিনিয়োগ দাঁড়াবে ৪৩ বিলিয়ন ডলার, যা লেবার পার্টির মতে আধুনিক অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আবাসন বিনিয়োগ।
ফেসবুকে সমালোচনার ঢল: “প্রচুর খরচ, সামান্য উপকার”
যদিও এই ঘোষণা অনেকের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছে, তবে সমানভাবে সমালোচনার ঝড়ও উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলবানিজের পোস্টে মাত্র ২৫ মিনিটেই ৩০০-র বেশি মন্তব্য আসে — যার বেশিরভাগই হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে।
আলিন্তা উডহাউস মন্তব্য করেন, “এই ঘোষণা কাকে সাহায্য করবে? এখনকার জীবনযাত্রার ব্যয় ও ভাড়ার অবস্থা এমন যে, মানুষ ৫ শতাংশ জমাও দিতে পারছে না।”
পিট কেলি লিখেছেন, “বাড়ির দাম আরও বাড়বে। উভয় পক্ষেরই এই ধরণের কাজ বোকামি। যখন হাউজিং মার্কেট ধসে পড়বে, তখন পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
টিম মার্লে বলেন, “আপনি কী বলছেন? সমস্যাটা বাড়ির অস্বাভাবিক দাম। এভাবে সামান্য পরিবর্তন করে কোনও লাভ হবে না।”
ড্যানিয়েলা গুয়ার্টলার মন্তব্য করেন, “একজন সাধারণ চাকুরিজীবী কীভাবে ৯৫ শতাংশ ঋণ ম্যানেজ করবে? আরও ভালো কিছু করুন।”
লিশ জবলিন প্রশ্ন তোলেন, “লোকে হয়তো ঋণ শোধ করতে পারবে, কিন্তু সেই ৫% জমা দেওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ — কম বেতন, আর পুরনো ৩ বেডরুমের বাড়ির জন্যই সাপ্তাহিক ভাড়া ৬০০ ডলারের উপরে।”
এই ঘোষণা পার্থ শহরে করা হয়েছে — ২০২২ সালের নির্বাচনে যেখানে লেবার পার্টি ১০.৫% সুইং পেয়ে চারটি অতিরিক্ত আসন পেয়েছিল। সেই সাফল্য পুনরায় অর্জন এবং ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় প্রভাব ধরে রাখার কৌশল হিসেবেই এই ঘোষণা এসেছে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
এই বড় মাপের হাউজিং পরিকল্পনা লেবার সরকারের জন্য আগামী ৩ মে’র নির্বাচনের আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর একটি হয়ে উঠেছে — যেখানে জীবনযাত্রার ব্যয়, প্রজন্মগত সুযোগ, এবং অর্থনৈতিক আস্থাই নির্বাচনী ফল নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখবে।