মেলবোর্ন, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ — সিঙ্গাপুরের একটি রান্না শিক্ষাকেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১০ বছর বয়সী এক অস্ট্রেলিয়ান কন্যাশিশুর মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে আরও অন্তত ১৫ জন শিশু ও ৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক আহত হয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার ৮ এপ্রিল, সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে, সিঙ্গাপুর শহরের রিভার ভ্যালি রোডে অবস্থিত তিনতলা একটি দোকানঘরে, যেখানে ‘টোমেটো কুকিং স্কুল’-এর কার্যক্রম চলছিল।
সিঙ্গাপুর সিভিল ডিফেন্স ফোর্স (SCDF) জানায়, আগুন ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ এবং নির্মাণ শ্রমিকেরা ঝুঁকি নিয়ে তৃতীয় তলার একটি কার্নিশে আটকে পড়া শিশুদের উদ্ধার করতে মই ও বাঁশের কাঠামো ব্যবহার করেন। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মই দিয়ে বাকি শিশুদের উদ্ধার করেন এবং ভেতরে ঢুকে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন।
SCDF জানায়,৩০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
প্রায় ৮০ জনকে ওই দোকানঘর এবং আশেপাশের ভবন থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। আহতদের মধ্যে ১৫ জন শিশু ও ৫ জন প্রাপ্তবয়স্ককে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। চ্যানেল নিউজ এশিয়ার খবরে বলা হয়েছে, রান্নার স্কুল ছাড়াও ভবনটিতে একটি থিয়েটার গ্রুপ এবং একটি রোবোটিক্স স্কুল রয়েছে।
তাদের মধ্যেই ছিলেন ১০ বছর বয়সী ওই অস্ট্রেলিয়ান শিশু, যিনি হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগ (DFAT) নিশ্চিত করেছে যে নিহত শিশু একজন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। DFAT এক বিবৃতিতে জানায়, “সিঙ্গাপুরে এক অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা তাঁর পরিবারের পাশে আছি এবং কনস্যুলার সহায়তা প্রদান করছি। এই কঠিন সময়ে আমরা পরিবারটির প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।”
উদ্ধার কাজে সহায়তাকারী বাংলাদেশের একজন নির্মাণ শ্রমিক শাকিল মোহাম্মদ দ্য স্ট্রেইটস টাইমসকে বলেছেন, “কিছু শিশু ভবন থেকে লাফ দিতে চেয়েছিল ”। আমি তাদের বলেছিলাম, ‘লাফ দিও না! আমি তোমাদের সাহায্য করব’,” মিঃ মোহাম্মদ বলেন।
SCDF এক মুখপাত্র বলেন, “যাঁরা আগুন লাগার পরপরই সাহসিকতার সঙ্গে উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁদের দ্রুত সিদ্ধান্ত ও সাহস অনেক প্রাণ বাঁচিয়েছে।”
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আগুনটি ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি সংরক্ষণ কক্ষ থেকে শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্ত এখনও চলছে।
‘টোমেটো কুকিং স্কুল’ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা এই অগ্নিকাণ্ডে হতবাক এবং গভীরভাবে শোকাহত। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি ও সমবেদনা রইল। তদন্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমরা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছি। আমাদের পক্ষে এই দুঃখকে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে বিনা দ্বিধায় যোগাযোগ করুন।”
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সিঙ্গাপুরজুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে, বিশেষত শিশুদের জন্য এমন এক নিরাপদ শিক্ষাস্থলে ঘটে যাওয়া এই অগ্নিকাণ্ডে। তদন্তে কী উঠে আসে, সেটিই এখন অপেক্ষার বিষয়।