মেলবোর্ন ১৫ এপ্রিল ২০২৫– ব্লু অরিজিনের নিউ শেফার্ড রকেট সোমবার (মার্কিন সময়) আকাশে উড়াল দেয় এক তারকা-খচিত অল-ফিমেল মহাকাশযাত্রী দল নিয়ে। এই দলে ছিলেন জনপ্রিয় পপস্টার ক্যাটি পেরি, লেখিকা লরেন সানচেজ, টিভি উপস্থাপক গেইল কিং, নাগরিক অধিকারকর্মী আমান্ডা নিউইয়েন, প্রাক্তন রকেট বিজ্ঞানী আইশা বোয়ি এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা কেরিয়ান ফ্লিন। উল্লেখযোগ্য, লরেন সানচেজ ব্লু অরিজিনের মালিক জেফ বেজোসের বাগদত্তা।
এই মিশন ছিল মাত্র ১১ মিনিটের, যার মধ্যে প্রায় চার মিনিট তারা অভিকর্ষহীন অবস্থায় ছিলেন। যাত্রাটি পশ্চিম টেক্সাসের লঞ্চ সাইট ওয়ান থেকে শুরু হয়। মহাকাশে থাকা অবস্থায় ছয়জন নারী মিলে বলেন, “Take up space,” যা নারীর ক্ষমতায়নের একটি বার্তা।
পেরি বলেছিলেন তিনি মহাকাশে গান গাইবেন, কিন্তু যাত্রীরাও ভাবেননি যে তিনি লুইস আর্মস্ট্রংয়ের ‘What a Wonderful World’ গাইবেন। অনেকে আশা করেছিলেন তিনি তার হিট গান ‘Firework’ পরিবেশন করবেন। পেরি বলেন, “এটা আমার নয়, আমাদের গল্প।”

তিনি মহাকাশে তার কন্যা ‘ডেইজি’-র উদ্দেশ্যে একটি ডেইজি ফুল তুলে ধরেন এবং জানান তার পরবর্তী কনসার্ট ট্যুরের সঙ্গীততালিকা একটি প্রজাপতির ওপর লেখা ছিল।
যাত্রার প্রতিক্রিয়ায় নাটকীয়তা ও সমালোচনা
যদিও যাত্রাটি সংক্ষিপ্ত ছিল, পেরি ও কিং উভয়েই পৃথিবীতে ফিরে চুমু খান মাটিতে। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ একে নাটকীয় বলে আখ্যা দিয়েছেন। কেউ লিখেছেন, “২০ সেকেন্ড মহাকাশে থেকে এমন অভিনয়!” অন্য কেউ বলেছে, “গার্ল, ওঠে দাঁড়াও।”
অনেকে একে “ছবির সুযোগ” এবং “বাস্তব মহাকাশ ভ্রমণের প্রতি ব্যঙ্গ” বলেও আখ্যা দিয়েছেন। তবে ক্যাটি পেরি এই অভিজ্ঞতাকে দিয়েছেন “১০-এ ১০” এবং বলেছেন, “১০০ শতাংশ আমি এ নিয়ে গান লিখব।”
তিনি আরও বলেন, “আমি ভালোবাসার সাথে এক অদ্ভুত সংযুক্তি অনুভব করেছি। এই অভিজ্ঞতা আমাকে বুঝিয়েছে, আমার মাঝে কত ভালোবাসা রয়েছে এবং আমি কতটা ভালোবাসা পাচ্ছি।”
গেইল কিং বলেন, “আমি এখনও নিজেকে মহাকাশচারী ভাবতে পারি না।” কিন্তু এই অভিজ্ঞতা তার জন্য ছিল একটি বড় সাহসিকতা — এমনকি এখন তিনি ভাবছেন কানে ছিদ্র করাতে পারেন।
তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অপরা উইনফ্রে ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী। পেরির ভয় কাটানোর বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একটু ঝাঁকুনি হলে সে সাধারণত সবার কোলে চলে যায়, কিন্তু আজ সে নিজের ভয়কে জয় করেছে।”
উইনফ্রে চোখের জল ফেলেন এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে। তিনি বলেন, “এটা শুধু মহাকাশে যাওয়া না, এটা নিজেকে জয় করার প্রতীক।”
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে ব্লু অরিজিনের কিছু প্রাক্তন কর্মী রকেটের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, “আমরা আমাদের নিরাপত্তা রেকর্ডে আস্থাশীল এবং নিউ শেফার্ড হচ্ছে সর্বকালের সবচেয়ে নিরাপদ মহাকাশযান।”
এই যাত্রাটি ব্লু অরিজিনের ১১তম মানব মিশন এবং এটি এমন একটি মাইলফলক, যা নারী মহাকাশচারীদের জন্য পথ উন্মুক্ত করছে। আইশা বোয়ি প্রথম বাহামিয়ান হিসেবে মহাকাশে গেছেন, এবং এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নারীদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
ক্যাটি পেরির ভাষায়, “এটা কাকতালীয় নয় যে আমার ডাকনাম ‘ফেদার’ এবং ‘টারটল’, আর যাত্রার ক্যাপসুলের নামও ‘টারটল’। মনে হচ্ছে যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি আমাকে পথ দেখাচ্ছে।”
এই সফল যাত্রা নারীর ক্ষমতায়ন, সাহস, এবং মহাকাশ অভিযানে নারীদের অংশগ্রহণের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রইলো।