মেলবোর্ন, এপ্রিল ১৬, ২০২৫- অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ ও বিরোধী দলীয় নেতা পিটার ডাটন, ফেডারেল নির্বাচনী প্রচারণার দ্বিতীয় বিতর্কে মুখোমুখি হন এবিসি-র নতুন সিডনির পারামাটা স্টুডিওতে। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয় ABC-র মূল চ্যানেল ও ABC NEWS-এ, পাশাপাশি ABC iview-এ সরাসরি স্ট্রিমিং করা হয়। বিতর্কের শুরুতে উভয় নেতা ৬০ সেকেন্ড করে সূচনা বক্তব্য রাখেন। পুরো বিতর্কটি সঞ্চালনা করেন ডেভিড স্পিয়ার্স।
ডাটনকে যখন প্রশ্ন করা হয় যে অস্ট্রেলিয়ানরা কি ইতিমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অনুভব করছে কিনা, তিনি জবাব দেন, “আমি জানি না, কারণ আমি বিজ্ঞানী নই।” জলবায়ু ইস্যুতে কোয়ালিশন দলের দীর্ঘদিনের দ্বিধান্বিত অবস্থান পুনরায় সামনে চলে আসে।
অপরদিকে, আলবেনিজ স্পষ্ট করে বলেন, “বিজ্ঞান একেবারে পরিষ্কার।” তিনি জানান, তাঁর সরকার নবায়নযোগ্য শক্তিকে গ্যাসের মাধ্যমে সমর্থন দিয়ে কাজ করছে।
আলবেনিজ অভিযোগ তোলেন, কোয়ালিশন সরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কোনো কাটছাঁট করবে না বললেও, ২০১৪/১৫ বাজেটে ৮০ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে দেওয়া হয়। যদিও ডাটন দাবি করেন, প্রকৃতপক্ষে বরাদ্দ পূর্বের চেয়ে কমেনি, বরং প্রতি বছর বাড়ছে—তবে আলবেনিজের চাহিদা অনুযায়ী নয়।
“আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করি, কিন্তু আমি প্রেসিডেন্টকে চিনি না। আমি তার সঙ্গে কখনও সাক্ষাৎ করিনি।”
ডেভিড স্পিয়ার্স মজা করে বলেন, বিতর্ক শুরু হওয়ার ৪০ মিনিট লেগে যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম প্রথমবার আসতে। এরপর ডাটনকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি ট্রাম্পকে বিশ্বাস করেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, “আমি আগেও বলেছি, হোয়াইট হাউস থেকে যেভাবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে সম্মানহানি করা হয়েছে, তা ছিল লজ্জাজনক এবং হতবাক করার মতো।” তিনি আরও বলেন, “আমি সেই মন্তব্যে অটল।” যখন আবারও তাকে প্রশ্ন করা হয় তিনি ট্রাম্পকে বিশ্বাস করেন কি না, তখন ডাটন কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখেন। বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করি, কিন্তু আমি প্রেসিডেন্টকে চিনি না। আমি তার সঙ্গে কখনও সাক্ষাৎ করিনি।”
আলবেনিজ একই প্রশ্নের উত্তরে সংক্ষেপে বলেন, “বিশ্বাস না করার কোনো কারণ নেই।” তিনি জানান, “আমার সঙ্গে তার একাধিক আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ আলোচনায় আমরা কিছু শব্দ ও বিষয় নিয়ে একমত হয়েছিলাম, যেগুলো নিয়ে তিনি পরবর্তীতে চিন্তা করবেন বলে জানান।”
এরপর উভয় নেতাকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্পর্কে একই প্রশ্ন করা হয়—তারা কি শি-কে বিশ্বাস করেন? আলবেনিজ বলেন, “বিশ্বাস না করার কোনো কারণ নেই।” তিনি আরও বলেন, “যেসব একান্ত আলোচনা হয়েছে, সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ ছিল।” ডাটনও বলেন, শি-কে অবিশ্বাস করার মতো কোনো কারণ নেই।
উভয় নেতাই AUKUS চুক্তিকে সমর্থন করেন। আলবেনিজ জানান, তাঁর সরকার প্রতিরক্ষা খাতে ৫৭ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়েছে এবং একটি স্ট্র্যাটেজিক রিভিউ চালিয়েছে, যার ফলাফল ছিল, “আমাদের আরও এমন কিছু দরকার যা বিকট শব্দ করে”—এমন মন্তব্য করে রসিকতা করেন তিনি।
‘Close the Gap’ ইস্যুতে উভয় নেতা স্বীকার করেন, উভয় দলেরই এই ক্ষেত্রে ব্যর্থতা রয়েছে। আলবেনিজ জানান, ভয়েস গণভোট ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি আদিবাসীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে মনোযোগী হয়েছেন। ডাটনও স্বীকার করেন যে অনেক জায়গায় উন্নতি হয়নি, তবে কিছু সফল মডেল রয়েছে যেগুলো অন্যত্র প্রয়োগ করা যায়।
আলবেনিজ বিতর্কের শেষ বক্তব্যে বলেন, “এই নির্বাচন একটি প্রকৃত অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য লেবার পরিকল্পনা বনাম কোয়ালিশনের কাটছাঁটের পরিকল্পনা।” ডাটনের “আমি বিজ্ঞানী না” মন্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি আবারও জলবায়ু ইস্যুতে লেবারের অবস্থান স্পষ্ট করেন।