মেলবোর্ন ২২ এপ্রিল- যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শত শত কোটি ডলারের ফেডারেল গবেষণা তহবিল কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এই পদক্ষেপকে দেশের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সরকারের “দমন নীতির অংশ” হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ম্যাসাচুসেটস ফেডারেল কোর্টে দায়ের করা মামলায় দাবি করা হয়েছে, প্রশাসনের এই পদক্ষেপ “অবৈধ ও সংবিধানবিরোধী” এবং এটি সরকারের ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছে। মামলায় বলা হয়, ফেডারেল তহবিলের মাধ্যমে হার্ভার্ডের একাডেমিক স্বাধীনতার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে প্রশাসন এই অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে।
হার্ভার্ডের আইনজীবীরা মামলায় যুক্তি তুলে ধরেন যে, গবেষণা তহবিল স্থগিত করার সিদ্ধান্ত প্রথম সংশোধনীর (First Amendment) লঙ্ঘন, ফেডারেল আইন উপেক্ষা করে নেওয়া হয়েছে এবং এই পদক্ষেপ জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা গবেষণাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
এই মাসের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসনের অ্যান্টি-সেমিটিজম মোকাবেলায় গঠিত জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে $২.২ বিলিয়ন ডলার অনুদান এবং $৬০ মিলিয়ন চুক্তির অর্থ স্থগিত করে, দাবি করে যে বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে। প্রশাসন আরও $১ বিলিয়ন গবেষণা তহবিল প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে।
হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার ১৪ এপ্রিল এক চিঠিতে জানান, “আমরা আমাদের স্বাধীনতা বা সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার সরকারকে সমর্পণ করব না।” সোমবার তিনি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে মামলার ঘোষণা দেন, যেখানে বলা হয়, প্রশাসনের দাবিগুলো “অভূতপূর্ব ও অনুচিত নিয়ন্ত্রণ” প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।
মামলায় আরও দাবি করা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন নাগরিক অধিকার আইন, ১৯৬৪ (Civil Rights Act of 1964) অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তহবিল স্থগিত করেছে। মামলায় আদালতের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে—এই তহবিল স্থগিতাদেশকে অবৈধ ঘোষণা করা হোক এবং এর কার্যকারিতা রোধ করা হোক।
গারবার বলেন, “সরকার গবেষণা কার্যক্রমে ইহুদিবিদ্বেষের সাথে কোনো যৌক্তিক সংযোগ দেখাতে পারেনি। এটি আমেরিকান গবেষণা, উদ্ভাবন, এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে।”
হার্ভার্ড ছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসন ব্রাউন, কলাম্বিয়া, কর্নেল, প্রিন্সটন, পেনসিলভানিয়া এবং নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নও কমিয়েছে। তবে হার্ভার্ড প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় যারা প্রকাশ্যে প্রশাসনের দাবির বিরোধিতা করেছে এবং আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে।
গারবার বলেন, “আজ আমরা সেই মূল্যবোধের পাশে দাঁড়াই, যা আমেরিকান উচ্চশিক্ষাকে বিশ্বের জন্য একটি আলো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইন মেনে সরকারের অনুচিত হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাদের ভূমিকা পালন করতে পারে।”
হোয়াইট হাউস এই মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।