মেলবোর্ন, ২৪ এপ্রিল- ভারত-শাসিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার একদিন পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে ভারত। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে—
- দুই দেশের মধ্যে সংযোগকারী প্রধান সীমান্ত চেকপয়েন্ট বন্ধ
- পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত
- কূটনীতিকদের বহিষ্কার
- দিল্লিতে পাকিস্তানি দূতাবাসে সেদেশের প্রতিরক্ষা, সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর যে ‘পরামর্শদাতারা’ রয়েছেন, তাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’, (অর্থাৎ অবাঞ্ছিত) বলে ঘোষণা করছে ভারত। তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে।
এছাড়া ভারত পাকিস্তানি নাগরিকদের কিছু ভিসা বাতিল করেছে এবং তাদের দুই দিনের মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে ভারত পাকিস্তানের কাছে “সীমান্ত সন্ত্রাসবাদে সমর্থন ত্যাগের” দাবি জানিয়েছে—যা ইসলামাবাদ অস্বীকার করে আসছে। মুসলিম অধ্যুষিত এই অঞ্চলে দশকের পর দশক ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী সহিংসতা চলছে।
ভারত সরকার এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করার ইঙ্গিত দিয়েছে। ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দাবি করেছে, ‘কাশ্মীর রেজিসটেন্স’ নামক একটি গোষ্ঠী এই হামলার পেছনে থাকতে পারে, যদিও সংবাদমাধ্যমগুলো এই দাবি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হামলাকারীদের ধরতে অভিযান চলছিল।
পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, দেশটির সর্বোচ্চ সামরিক ও নিরাপত্তা সংস্থা ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল’ বৃহস্পতিবার বৈঠক করবে। পহেলগাম হামলার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা “পর্যটকদের মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন” এবং শোক প্রকাশ করেছে।
ভারত দীর্ঘদিন ধরে ইসলামাবাদের পরপর সব সরকারের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করার অভিযোগ করে আসছে, যা পাকিস্তান জোরালোভাবে অস্বীকার করে।
বুধবার ভারতের ঘোষণা অনুযায়ী, দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানি সামরিক উপদেষ্টাদের অবিলম্বে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে আরও কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা হতে পারে।
এই হামলা পরমাণু-শক্তিধর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা আবারও বাড়িয়ে দিতে পারে। ভারত সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, “হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের জবাবদিহি করতে বাধ্য করা হবে।”
এর আগে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে হামলাকারীদের লক্ষ্য করেই শুধু ভারতের পদক্ষেপ সীমাবদ্ধ থাকবে না। তিনি বলেন, “আমরা শুধু হামলাকারীদেরই নয়, তাদের পেছনে থাকা ষড়যন্ত্রকারীদেরও ধরবো, যারা ভারতের মাটিতে এমন ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করেছে।”
নিহতদের বেশিরভাগই হিন্দু পুরুষ হলেও একজন স্থানীয় মুসলিমও ছিলেন। ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে লক্ষ্য করা হয়েছিল কিনা, সে বিষয়ে ভারত সরকার কোনো সরকারি বিবৃতি দেয়নি।
এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক নেতারা এবং ভারতে ব্যাপক ক্ষোভ ও শোকের সৃষ্টি হয়েছে। হামলার সময় পর্যটকরা (সহ সম্পূর্ণ পরিবার) প্রাণ বাঁচাতে ছোটাছুটি করছিলেন, রক্তাক্ত দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছিল।
কিছু সাক্ষী বলেছেন, হামলাকারীরা অমুসলিমদের লক্ষ্য করেছিল, তবে অন্যরা বলেছেন গুলিবর্ষণ ছিল এলোমেলো। নিহতদের বেশিরভাগই হিন্দু পুরুষ হলেও একজন স্থানীয় মুসলিমও ছিলেন। ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে লক্ষ্য করা হয়েছিল কিনা, সে বিষয়ে ভারত সরকার কোনো সরকারি বিবৃতি দেয়নি।