মেলবোর্ন, ২৪ এপ্রিল—গাজায় ইসরায়েলি বন্দিদের আটকে রাখা মানে ইসরায়েলকে হামলার অজুহাত তুলে দেয়া—এই মন্তব্য করে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসকে বন্দিমুক্তি ও অস্ত্র পরিত্যাগের আহ্বান জানান ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তবে আব্বাসের এই মন্তব্যকে ‘অপমানজনক’ আখ্যা দিয়ে কঠোর নিন্দা জানিয়েছে হামাস।
বৃহস্পতিবার হামাসের শীর্ষ নেতা বাসেম নাঈম বলেন, “আব্বাস বারবার এবং সন্দেহজনকভাবে দখলদার বাহিনীর অপরাধ এবং আমাদের জনগণের উপর চলমান আগ্রাসনের দায় হামাসের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন।”
গত বুধবার মাহমুদ আব্বাস রামাল্লায় একটি সভায় বলেন, “হামাস বন্দিদের মুক্তি না দিয়ে ইসরায়েলকে অপরাধ করার সুযোগ দিচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “আমি দাম দিচ্ছি, আমাদের জনগণ দাম দিচ্ছে, ইসরায়েল নয়। ভাই, বন্দিদের হস্তান্তর করো।”
আব্বাস বলেন, “প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। তোমরা কুকুরের বাচ্চারা, যা কিছু তোমাদের কাছে আছে তা হস্তান্তর করো এবং আমাদের এই দুর্দশা থেকে মুক্ত করো।” এই কঠোর আরবি গালি ব্যবহার করে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
প্রায় ২০ বছর ধরে হামাস ও আব্বাসের ফাতাহ্ দলের মধ্যে রাজনৈতিক ও আদর্শগত বিভাজন বিদ্যমান। হামাস অভিযোগ করে আসছে, আব্বাস ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন এবং পশ্চিম তীরের প্রতিবাদ দমন করছেন। অপরদিকে, ফাতাহ্ হামাসকে ফিলিস্তিনি ঐক্য বিনষ্ট করার জন্য অভিযুক্ত করে।
২০০০-এর দশকে ফাতাহ থেকে পৃথক হয়ে গঠিত ফিলিস্তিনি মুজাহিদিন আন্দোলনও আব্বাসের মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, “আমরা প্রেসিডেন্ট আব্বাসের কেন্দ্রীয় পরিষদের বৈঠকে দেয়া বক্তব্যের কঠোর নিন্দা জানাই, যেখানে তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের প্রতি অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করেছেন এবং ফিলিস্তিনিদের ত্যাগ ও সংগ্রামকে উপেক্ষা করেছেন।”
তারা আরও জানায়, “এই ধরনের বক্তব্য বিশেষ করে গাজায় গণহত্যা, পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের দখল এবং বন্দিদের অমানবিক পরিস্থিতি প্রতিরোধ আন্দোলনকে অপরাধী বানায় এবং ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের অপরাধগুলোকে বৈধতা দেয়।”
তারা আব্বাসের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে এবং জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, মার্চ ১৮ থেকে ইসরায়েলের গাজা অভিযানের ফলে এখন পর্যন্ত অন্তত ১,৯২৮ জন নিহত হয়েছেন, এবং যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মোট প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৫১,৩০৫-এ, জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনায় এখনও কোনও অগ্রগতি হয়নি। তবে হামাসের একটি প্রতিনিধি দল কায়রোতে রয়েছে, যেখানে মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় নতুন আলোচনার চেষ্টা চলছে।