মেলবোর্ন, ২৬ এপ্রিল (ওটিএন বাংলা):
বাংলা নববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে ভিক্টোরিয়ার বাংলা আর্ট সেন্টার (BACV)-এর আয়োজনে গ্লোরিয়া পাইক নেটবল কমপ্লেক্স, নোবেল পার্কে অনুষ্ঠিত হলো বর্ষবরণ উৎসব ১৪৩২। বাংলা সংস্কৃতির রঙ, স্বাদ ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে সজ্জিত এ উৎসবে হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি ও স্থানীয় অস্ট্রেলিয়ানরা অংশ নিয়ে বৈশাখের প্রাণবন্ত আবেশে মাতিয়ে তোলেন পুরো অনুষ্ঠান।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উৎসবের ঝলক:
সকাল ১১টায় মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা। রঙিন ফেস্টুন, পোস্টার, ঢাক-ঢোল আর ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত বাংলাদেশী কমিউনিটির সদস্যরা মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন। বাংলাদেশের গ্রামীণ বৈশাখী মেলার আদলে সাজানো হয়েছিল উৎসব প্রাঙ্গণ। এতে স্থান পেয়েছিল নানান স্বদেশি স্টল—শাড়ি, ঐতিহ্যবাহী পোশাক, গহনা, খেলনা থেকে শুরু করে হস্তশিল্পের নিদর্শন। পাশাপাশি ইলিশ-পোলাও, লুচি-লাবরা, চাটপটি, ফুচকা, বিরিয়ানি, পিঠা ও মিষ্টির সুঘ্রাণে মুখরিত হয়েছিল মেলা চত্বর।


অতিথিদের বক্তব্যে বহুসংস্কৃতির প্রতি সমর্থন:
উদ্বোধনী পর্বে বিশিষ্ট অতিথিরা বাংলা সংস্কৃতির প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও অস্ট্রেলিয়ার বহুসংস্কৃতিবাদী সমাজে বাংলাদেশিদরের অবদানের কথা তুলে ধরেন। গ্রেটার ড্যান্ডেনংয়ের মেয়র কাউন্সিলর জিম মেমেটি বলেন, “আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে এমন এক বহুসাংস্কৃতিক সমাজে বাস করি। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আমি সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই।” তিনি সবাইকে বাংলায় শুভ নববর্ষ বলে উৎসাহিত করেন। উপস্থিত দর্শকরা তার এই প্রচেষ্টাকে করতালির মাধ্যমে অভিনন্দন্দিত করেন।
“আমার মা-ও একজন অভিবাসী ছিলেন, এবং আমি নিজেও অভিবাসন ও বৈচিত্র্যে গর্ববোধ করি। আমি বাংলা বলতে না পারলেও বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে আমি মনে প্রাণে লালন এবং সম্মান করি।”
এডেন ফস্টার এমপি, পার্লামেন্ট মেম্বার, (মালগ্রেভ) বলেন, “আমার মা-ও একজন অভিবাসী ছিলেন, এবং আমি নিজেও অভিবাসন ও বৈচিত্র্যে গর্ববোধ করি। আমি বাংলা বলতে না পারলেও বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে আমি মনে প্রাণে লালন এবং সম্মান করি।”
জেসন উড এমপি, শ্যাডো মন্ত্রী, (কমিউনিটি সেফটি ও মাল্টিকালচারাল অ্যাফেয়ার্স), বলেন, “বাংলাদেশি কমিউনিটি বিগত কয়েক বছর ধরে এই অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, এবং এই উদ্যোগে সহায়তা করতে পেরে আমরা গর্বিত ।”
গ্যাব্রিয়েল উইলিয়ামস এমপি, মন্ত্রী (গভর্নমেন্ট সার্ভিসেস), বলেন, “আলবানিজ সরকারের মাল্টিকালচারাল পলিসি বাংলাদেশি কমিউনিটির অংশগ্রহণের মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। আমি আশাবাদী এই সমর্থন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।”
“আমি বহু বাংলাদেশিকে চিনি যারা উচ্চশিক্ষিত, পিএইচডি, মাস্টার্সধারী। বাংলাদেশিরা অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি, শিক্ষা, গবেষণা এবং সংস্কৃতিতে অভাবনীয় অবদান রাখছে।”
জুলিয়ান হিল এমপি, অ্যাসিস্ট্যান্ট মন্ত্রী (সিটিজেনশিপ অ্যান্ড মাল্টিকালচারাল অ্যাফেয়ার্স), বলেন, “আমি বহু বাংলাদেশিকে চিনি যারা উচ্চশিক্ষিত, পিএইচডি, মাস্টার্সধারী। বাংলাদেশিরা অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি, শিক্ষা, গবেষণা এবং সংস্কৃতিতে অভাবনীয় অবদান রাখছে।”
বৈশাখের এই উৎসব কেবল একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই নয়, বরং প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতির প্রাণের স্পন্দন, বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ঐক্যের প্রতীক। নাচ, গান, কবিতা আর লোককাহিনির মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্যে ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন রচিত হয়। নতুন বছরের এই সূচনা আমাদের অতীতকে সম্মান জানিয়ে বর্তমানকে উদযাপন এবং ভবিষ্যতের দিকে আত্মবিশ্বাসীভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়।
BACV-এর সভাপতি জহর ভৌমিক সকল অতিথি, অংশগ্রহণকারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এই উৎসব আমাদের পরিচয়ের প্রতীক এবং অস্ট্রেলিয়ার সমাজকে সমৃদ্ধ করার একটি মাধ্যম।”
সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলা এই উৎসবে ভিক্টোরিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেয় এবং পুরো অনুষ্ঠানটি পরিণত হয় এক প্রাণবন্ত বাঙালি মিলনমেলায়।
শুভ নববর্ষ ১৪৩২!
— রিপোর্ট: OTN Bangla, Melbourne.