মেলবোর্ন, ২৭ এপ্রিল- (ওটিএন বাংলা): ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত হোয়াইট হাউস বৈঠকের পর পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রথমবারের মতো মুখোমুখি সাক্ষাৎ করেছেন। শনিবার সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় প্রায় ১৫ মিনিটের একান্ত আলোচনায় মিলিত হন তাঁরা। জেলেনস্কির দপ্তর থেকে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, দুই নেতা ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনা করছেন, যার ব্যাকড্রপে ছিল পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় জমায়েত হওয়া হাজারো শোকসন্তপ্ত মানুষ।
হোয়াইট হাউস এ বৈঠককে “ফলপ্রসু” বলে বর্ণনা করেছে, আর প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম X-এ লেখেন, “আমরা একান্তে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের জনগণের জীবন রক্ষা, পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি—এটাই আমাদের লক্ষ্য। এই প্রতীকী সাক্ষাৎ ইতিহাসের অংশ হতে পারে, যদি আমরা যৌথ ফলাফল অর্জন করতে পারি।”
জেলেনস্কির কার্যালয় আরও জানিয়েছে, দুই নেতার মধ্যে একই দিন পরে আরও একটি বৈঠকের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তবে সেটি আদৌ হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এরপর ট্রাম্প রোম ত্যাগ করলে তাঁর Truth Social অ্যাকাউন্ট থেকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করে একটি পোস্ট প্রকাশ করা হয়। পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, “পুতিনের কোনো কারণ ছিল না বিগত কয়েক দিনে বেসামরিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার। এটা ভাবতে বাধ্য করে যে তিনি আসলে যুদ্ধ থামাতে চান না।”
তিনি আরও বলেন, “প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে!!! তাঁকে ভিন্নভাবে মোকাবিলা করতে হবে—ব্যাংকিং বা সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে? ”
ট্রাম্প পরবর্তীতে Truth Social-এ জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর বৈঠকের ছবি প্রকাশ করেন। ইতালির রোমে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা সেখানে জড়ো হয়েছেন। ট্রাম্প-জেলেনস্কির এ সাক্ষাৎ ছিল আগের বিতর্কিত বৈঠকের সম্পূর্ণ বিপরীত—যেখানে হোয়াইট হাউসে দুই নেতা এবং মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স প্রকাশ্য বিবাদে জড়িয়ে পড়েন এবং একটি খনিজ সম্পদ বিষয়ক চুক্তি সই হওয়ার আগেই আলোচনা ভেস্তে যায়।
ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকে ট্রাম্প বলেছিলেন, ইউক্রেনের হাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার “কার্ড” নেই। তখন ভ্যান্স অভিযোগ করেছিলেন, জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া সহায়তার যথাযথ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না।
বর্তমান মার্কিন নেতৃত্বাধীন শান্তি উদ্যোগে কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে সংঘাতের ফ্রন্টলাইন যেখানে আছে সেখানে স্থিতিশীল করে রাখা এবং ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে। যদিও জেলেনস্কি এমন শর্তকে বরাবরই “অগ্রহণযোগ্য” বলে উল্লেখ করেছেন।
শনিবার, জেলেনস্কির কার্যালয় তাঁর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে কথোপকথনের একটি ছবিও প্রকাশ করেছে।
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও, যিনি বলেন, “সবাই শান্তি চায়—এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এখন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে যে তিনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন। আমাদের সকলেরই এই যুদ্ধের অবসান চাওয়া উচিত—এটি শুধুই শক্তি, আশা এবং প্রাণের অপচয়।”
সূত্র: ABC News- রিলি স্টুয়ার্ট এবং ইউরোপ ব্যুরো প্রধান মাজো ফোর্ড, ভ্যাটিকান সিটি, এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প Truth Social ।