মেলবোর্ন, ৪ মে —গতকাল হয়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল নির্বাচনের ফলাফল এক সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—লেবার দল তাদের অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে, কিন্তু কোয়ালিশন তা পারেনি। ২০২৫ সালের নির্বাচনে কোয়ালিশনের বিশৃঙ্খল প্রচারাভিযানের ফলে বিরোধী দলনেতা পিটার ডাটনসহ অনেক শীর্ষ নেতার পরাজয়।
লেবার পার্টির জন্য নির্বাচনের রাতটি ছিল চমকপ্রদ। কিন্তু কোয়ালিশনের জন্য ছিল একটি বিপর্যয়ের রাত। সবার আলোচনার কেন্দ্রে ছিল কোয়ালিশনের ভরাডুবি এবং ডাটনের রাজনৈতিক পরিসমাপ্তি। ১৯৪৯ সালের পর থেকে কোনো প্রধান রাজনৈতিক দলের এটি ছিল অন্যতম সবচেয়ে খারাপ ফলাফল। এর বিপরীতে, লেবার একটি ইতিবাচক ও ভবিষ্যতমুখী প্রচারাভিযানের মাধ্যমে বিশাল জয় অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী এক উচ্ছ্বসিত লেবার সমর্থক দলের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে ‘ঐক্য, ন্যায়, সমতা ও পারস্পরিক সম্মান’-এর বার্তা তুলে ধরেন এবং ডাটনের পরাজয় নিয়ে উল্লাস না করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “অস্ট্রেলিয়ায় আমরা মানুষকে সম্মান দেখাই।”
কোয়ালিশনের ভুল শিক্ষা
গত তিন বছরে রাজনীতিতে একটি বড় ইস্যু ছিল ‘ভয়েস টু পার্লামেন্ট’। লেবার এ নিয়ে বিপুল রাজনৈতিক মূলধন ব্যয় করেছিল এবং জনগণের অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু কোয়ালিশন ভুলভাবে ধরে নিয়েছিল যে, ভয়েস ইস্যুতে তাদের নেতিবাচক প্রচারণা ছিল সাফল্যের সূত্র, এবং এই নেতিবাচক কৌশলই জাতীয় পর্যায়েও কাজে দেবে। এই ধারার কারণে তারা গঠনমূলক নীতি প্রণয়নের পরিবর্তে বিভ্রান্তিকর প্রচারণায় সময় ব্যয় করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০২৪ সালের বিজয় কোয়ালিশনের আত্মতুষ্টিকে আরও বাড়িয়ে দেয়। বছরের শুরুতে ছায়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাদের মন্ত্রীরা যেন ‘চার্টার লেটার’ প্রস্তুত করেন—এই নির্দেশই প্রমাণ করে তারা আগেভাগেই ক্ষমতা পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল।
বাস্তব ইস্যুগুলোকে উপেক্ষা
লেবার দল ভোটারদের আসল উদ্বেগ—কস্ট অফ লিভিং, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সড়ক নিরাপত্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তা—এই ইস্যুগুলোকে গুরুত্ব দিয়েছে। কোয়ালিশন সেগুলোকে উপেক্ষা করেছে।
কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মুদ্রাস্ফীতি এবং উৎপাদনশীলতা নিয়ে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল প্রমাণহীন এবং ভিত্তিহীন। পিটার ডাটনের জাতীয় নিরাপত্তা ও সীমান্তরক্ষা নিয়ে অতিরিক্ত মনোযোগ তাকে অর্থনীতি নিয়ে ভাবার অবকাশ দেয়নি।
বরং তারা অভিবাসনবিরোধী মনোভাবকে উসকে দেয়, “ওয়েলকাম টু কান্ট্রি” অনুষ্ঠানে অস্বস্তি সৃষ্টি করে, ভয়েস ইস্যু ফের তোলার ইঙ্গিত দেয় এবং শিক্ষার পাঠ্যক্রম ও মিডিয়াকে ‘উইক’ বলে আক্রমণ করে। নিউজ কর্প ও স্কাই নিউজের আঞ্চলিক মিডিয়া নেটওয়ার্ক এ প্রচারণায় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।
‘কালচার ওয়ারস’ ব্যর্থ কৌশল
‘কালচার ওয়ারস’ বা সংস্কৃতি যুদ্ধ—এই ধরনের কৌশলকে এক সময় হাতিয়ার বানিয়েছিল কোয়ালিশন, যা ছিল নিছক রাজনৈতিক অলসতা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জনগণ এসব অভিযোগকে গুরুত্ব দেয়নি। বরং যারা বাস্তবিক সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলেছে, তারাই ভোটারদের আস্থা পেয়েছে।
এই একই পথে হেঁটেছিল গ্রিন পার্টিও, যারা অভিযোগ-ভিত্তিক রাজনীতির শরণ নিয়েছিল, এবং তারাও ভোটারদের থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
২০২৫ সালের এই নির্বাচন অস্ট্রেলিয়ান রাজনীতিতে এক নতুন বার্তা দিয়েছে—নেতিবাচক নয়, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই জনগণের সমর্থন অর্জনের মূল চাবিকাঠি।
ABC-এর 7.30 প্রোগ্রামের রাজনৈতিক সম্পাদক, লরা টিংগল এর মতামত অবলম্বনে