সম্পাদকীয়- ৬ মে ২০২৫- আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ট্যুরিস্ট অ্যাপ্রিসিয়েশন ডে, বা পর্যটক প্রশংসা দিবস। এখন পর্যন্ত যত দেশ এবং জায়গা ভ্রমণ করেছি, এতোটুকু বলতে পারি, অস্ট্রেলিয়া ও বৃহত্তর ওশেনিয়া অঞ্চলের মানুষদের হৃদয় অনেক বড়। এই অঞ্চলের মানুষ প্রতিবছর উজাড় করে লক্ষ লক্ষ ভ্রমণপিপাসু মানুষকে স্বাগত জানায় যারা প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও সম্পর্কের খোঁজে ঘুরে বেড়ান পৃথিবী জুড়ে।
ফিজির সাদা বালির সৈকত থেকে শুরু করে নিউজিল্যান্ডের তুষারঢাকা পাহাড়, অথবা অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক উলুরু পাহাড়, কিংবা গ্রেট ওশান রোড ও দুর্দান্ত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ—ওশেনিয়ার প্রতিটি কোণ শুধুই দৃশ্যপট নয়, বরং এক একটি জীবন্ত কাহিনি। আদিবাসী ঐতিহ্য, অভিবাসীদের জীবনযাত্রা এবং বহুসাংস্কৃতিক সহাবস্থানের এক অপূর্ব মিলনমেলা এখানে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে।
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনগন্তব্য হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মেলবোর্ন যা বিশ্বের বসবাসযোগ্য শহরগুলির অন্যতম এর আঁকাবাঁকা গলিপথ, সিডনি অপেরা হাউসের নাট্যমঞ্চ, কিংবা ক্যানবেরার পার্লামেন্ট হাউস—সবখানেই পর্যটকের উপস্থিতি মানে একে অপরের সংস্কৃতিকে জানার সুযোগ। আর এই অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হয় যখন তারা অংশ নেন বাঙালি পহেলা বৈশাখ, কিংবা ইন্ডিয়ানদের দিওয়ালি কিংবা চাইনিজদের চাইনিজ নিউ ইয়ারের মতো উৎসবে।
পর্যটন কেবল অর্থনৈতিক দিক নয়, এটি মানবিক সংযোগের একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যখন বিদেশিরা আমাদের অনুষ্ঠানে অংশ নেন, তখন তা কেবল দেখার বিষয় নয়—তারা আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠেন।
ওশেনিয়ার ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র যেমন সামোয়া, ভানুয়াতু ও টোঙ্গার জন্য পর্যটন শুধু অর্থনৈতিক নয়, তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় টিকিয়ে রাখার একটি প্রধান মাধ্যম। পর্যটকেরা কৌতূহল নিয়ে আসেন, আর এখানকার মানুষ বিনিময়ে দেন উষ্ণ আতিথেয়তা।
তবে এই দিনটি শুধুই উদযাপনের নয়, বরং সচেতনতারও। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে ওশেনিয়ার বহু দ্বীপদেশ যখন টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত, তখন টেকসই ও দায়িত্বশীল পর্যটনের গুরুত্ব আরও বেড়েছে। স্থানীয় সংস্কৃতি ও প্রকৃতিকে সম্মান জানিয়ে ভ্রমণ করা সকল পর্যটকদের দায়িত্ব।
অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসী পর্যটন, পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ এবং বহু সংস্কৃতির উৎসবগুলো পর্যটনকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শিক্ষণীয় করে তুলেছে। কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বে আন্তর্জাতিক পর্যটনের নবজাগরণ এই সংকল্পকে আরও জোরালো করেছে।
তবে এই উদযাপনের মাঝেই আজকের দিনে আমরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্মরণ করতে চাই—নিরাপত্তা প্রতিটি পর্যটকের মৌলিক অধিকার। ট্যুরিস্ট অ্যাপ্রিসিয়েশন ডে-তে আমাদের আশা—বিশ্বের প্রতিটি পর্যটক যেন কোথাও ভ্রমণকালে নিরাপদ বোধ করেন, সুরক্ষিত থাকেন এবং সম্মান পান।
দুঃখজনকভাবে, সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগামে ঘটে যাওয়া একটি নির্মম সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটক নিহত হন। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে এখনও বিশ্বজুড়ে ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা কতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা এই ঘটনায় নিহত সকল পর্যটকের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।
পর্যটন শান্তি ও সংহতির প্রতীক। যারা পর্যটকদের উপর হামলা চালায়, তারা মানবতার মূল মূল্যবোধকে আঘাত করে। আমরা যেন ভয়কে জয় করে আরও সচেতন, সহানুভূতিশীল ও ঐক্যবদ্ধ হই। পৃথিবীর প্রতিটি কোণে ভ্রমণ হবে আনন্দময় ও নিরাপদ এই আশাবাদ আমাদের সকলের।
প্রদীপ রায়,
সম্পাদক- ওটিএন বাংলা, মেলবোর্ন