মেলবোর্ন, ৭ মে- গাজার যুদ্ধ পরিস্থিতি ও নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘দ্য নিউ ইয়র্কার’ সাময়িকীতে লেখা প্রবন্ধগুলোর জন্য এ বছর পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন ফিলিস্তিনি কবি মোসাব আবু তোহা।
‘কমেন্টারি’ বিভাগে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরস্কার ঘোষণার পর নিজের সোশাল মিডিয়ায় আবু তোহা লেখেন, “আমি পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছি। এটা যেন আশার বাতি হয়ে জ্বলে, যেন একটা গল্প হয়ে বেঁচে থাকে।”
তার এই কথাকে অনেকে মনে করছেন গাজায় নিহত আরেক ফিলিস্তিনি কবি রিফাআত আলআরীরের প্রতি শ্রদ্ধা। আলআরীর শেষ কবিতার শিরোনাম ছিল, “If I must die, let it be a tale”—“যদি আমাকে মরতেই হয়, তা হোক এক কাহিনি।”
I have just won a Pulitzer Prize for Commentary.
Let it bring hope
Let it be a tale pic.twitter.com/VP6RsPY6vz
— Mosab Abu Toha (@MosabAbuToha) May 5, 2025
২০২৩ সালে গাজার উত্তরে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন মোসাব আবু তোহা। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং তিনি মিশর হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেন।
‘দ্য নিউ ইয়র্কার’-এ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে তিনি লেখেন, “গত এক বছরে আমি অনেক স্মৃতি হারিয়েছি—মানুষ, জায়গা আর ব্যবহার্য জিনিসপত্র—যেগুলো আমাকে আমার অস্তিত্বের সঙ্গে জুড়ে রাখত। গাজায় প্রতিটি ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ি যেন একটি অ্যালবাম, যেখানে ছবি নেই—আছে মৃত মানুষের দেহ, পাতার ফাঁকে যেন তারা চিরস্থায়ী হয়ে আছে।”
যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে আবু তোহা দেশটির ডানপন্থী ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠীর সমালোচনার মুখে পড়েন। তাদের অভিযোগ, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসে ইসরায়েলবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং এজন্য তার নাগরিকত্ব বাতিল করা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর অভিবাসীদের বিষয়ে কড়াকড়ি অবস্থান নিচ্ছেন। এর মধ্যে যেসব মানুষ প্রকাশ্যে ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান নিচ্ছেন, তাদের ওপরও চাপ বাড়ছে। নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়ায় আবু তোহা সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বাতিল করেছেন।
আলজাজিরার ‘দ্য টেইক’ পডকাস্টে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ভাবুন তো, আপনি গাজায় একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া পরিবার ও শিশুদের সঙ্গে আছেন। কিন্তু কিছুই করতে পারছেন না—না খাবার, না পানি, না ওষুধ। তারপর আপনি রয়েছেন এমন এক দেশে, যারা সেই ধ্বংসযজ্ঞে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। এটা ভীষণ হৃদয়বিদারক।”
এ বছর মোট ১৪টি সাংবাদিকতা বিভাগে পুলিৎজার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চারটি পুরস্কার জিতেছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। তারা পেয়েছে ব্যাখামূলক প্রতিবেদন, স্থানীয় প্রতিবেদন, আন্তর্জাতিক কভারেজ এবং ব্রেকিং নিউজ ফটোগ্রাফিতে।
আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনের জন্য পুলিৎজার জিতেছে টাইমসের সুদান যুদ্ধ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন। এই বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, যারা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের হত্যার ঘটনা অনুসন্ধান করেছে।
তবে ট্রাম্পের একটি নির্বাচনী সমাবেশে ব্যর্থ হত্যাচেষ্টার তাৎক্ষণিক কভারেজের জন্য ‘ব্রেকিং নিউজ’ বিভাগে পুলিৎজার পেয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
অন্যদিকে, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য পুলিৎজার জিতেছে রয়টার্স, যারা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ফেন্টানিলের অবাধ ব্যবহারে দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন করেছে।
প্রতিবছর নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ঘোষণা করা হয় পুলিৎজার পুরস্কার। সাংবাদিক ও একাডেমিকদের নিয়ে গঠিত একটি বোর্ড বিজয়ীদের নির্বাচন করে।