OTN Bangla ডেস্ক | প্রকাশিত: মেলবোর্ন, ০৯ মে– ১০ :০৩
বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক গির্জার নেতৃত্বে ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে—রবার্ট প্রেভোস্ট হয়েছেন প্রথম আমেরিকান পোপ। তিনি এখন পরিচিত হবেন পোপ লিও চতুর্দশ নামে।
ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে জড়ো হওয়া হাজারো মানুষের সামনে তিনি বলেন, “সকলের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।”
৬৯ বছর বয়সী শিকাগো-জন্ম নেওয়া প্রেভোস্টকে একজন সংস্কারক হিসেবেই দেখা হয়। তিনি বহু বছর পেরুতে মিশনারি হিসেবে কাজ করেছেন এবং পরবর্তীতে সেখানেই আর্চবিশপ নিযুক্ত হন।
যুক্তরাষ্ট্রে গর্বের প্রতীক
পোপ লিও চতুর্দশ নির্বাচিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা তাকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে “মহান গর্বের” বিষয় বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আমেরিকার সিনেটর রুবেন গ্যালেগো বলেন, “আমরা খুবই আনন্দিত। একজন আমেরিকান পোপ গির্জাকে আধুনিক যুগে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন এবং এটি গির্জার টিকে থাকার সহায়ক হবে।”
রিপাবলিকান সিনেটর সুসান কলিন্স আশা প্রকাশ করে বলেন, “এই নির্বাচন আমাদের দেশের প্রতি বিশ্ববাসীর আস্থা বাড়াবে এবং আমেরিকান জাতির মহানুভবতাকে তুলে ধরবে।”
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিনিধি হাকিম জেফরিজ বলেন, “এই নৈতিক মুহূর্তে আমি প্রার্থনা করি, পোপ লিও চতুর্দশ পোপ ফ্রান্সিসের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন এবং পৃথিবীর দুর্বল মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও আশার বাতিঘর হয়ে উঠবেন।”
পুরনো বন্ধুর চোখে নতুন পোপ
পেরুতে দশ বছর একসাথে বসবাসকারী রেভারেন্ড জন লিডন বলেন, “পোপ লিও অসাধারণ এবং অত্যন্ত সহজ-সরল একজন মানুষ। রান্না ও গান করার প্রতি তার ভালোবাসা ছিল। মাঝে মাঝে তিনি নিজেই পিজ্জা বানাতেন, কারণ সেই সময় পেরুতে ভালো পিজ্জা পাওয়া যেত না।”
তিনি বলেন, “তার জন্মদিনের জন্য পুরো সপ্তাহ ব্লক করে রাখতে হতো, কারণ প্যারিশের প্রতিটি অংশ তার জন্মদিন উদযাপন করতে চাইত।”
পেরুর জন্য গর্ব, ক্যাথলিকদের জন্য স্থিতিশীলতার প্রতীক
কার্ডিনাল রবার্ট প্রেভোস্ট পোপ লিও চতুর্দশ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় পেরুতে গর্ব ও আবেগের এক অনন্য ঢেউ উঠেছে। বহু বছর তিনি পেরুতে যাজক হিসেবে কাজ করেছেন এবং সেখানে একজন বিশপ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্তে বলেন, “তার নির্বাচন আমাদের জাতিকে গর্ব ও আশায় পূর্ণ করেছে। পেরু ছিল তার ঘর, তার মিশন এবং তার বিশ্বাসের স্থান।”
পেরুর অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা ক্যাথলিক এবং ২০১৫ সালে যে ব্যক্তি পেরুর নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন শুধু বিশপ হিসেবে কাজ করার জন্য—তার মতো একজনকে ক্যাথলিক চার্চের বৈশ্বিক নেতা হিসেবে পাওয়া নিঃসন্দেহে পুরো দেশজুড়ে প্রশংসিত হবে।
প্রেভোস্ট আগেই একাধিকবার পেরুর প্রতি নিজের অঙ্গীকার প্রকাশ করেছেন। ২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্তিলোর অপসারণের পর যখন দেশব্যাপী প্রাণঘাতী আন্দোলন শুরু হয়, তখন তিনি এখনও চিকলায়োর বিশপ ছিলেন এবং পোপ ফ্রান্সিসকে অনুরোধ করেছিলেন তাকে দেশে থাকতে দেওয়ার জন্য, যাতে তিনি “জনগণের পাশে থাকতে পারেন।”
পোপ লিও চতুর্দশের এই নিযুক্তি নিশ্চিতভাবেই পেরুর ক্যাথলিক গির্জায় পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কারমূলক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ করবে। উল্লেখ্য, এই গির্জা দীর্ঘদিন ধরেই সোডালিতিয়াম অব খ্রিস্টিয়ান লাইফ নামের একটি প্রভাবশালী ও রক্ষণশীল ধর্মীয় গোষ্ঠীতে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বিতর্কে জর্জরিত।
পোপ ফ্রান্সিস মৃত্যুর কয়েক মাস আগে এই গোষ্ঠীকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন, যার ফলে পেরুর রক্ষণশীল ক্যাথলিক অভিজাত শ্রেণি ও তাদের রাজনৈতিক মিত্ররা অসন্তুষ্ট হন। পেরুতে পোপ লিও চতুর্দশকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে যিনি তার পূর্বসূরির দেখানো পথেই এগিয়ে যাবেন।