মেলবোর্ন- ০৯ মে, ২০২৫- প্রকাশিত: রাত ১০:০৫ | – হিন্দুস্তান টাইমস সূত্রে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, বিশিষ্ট লেখক ও বালোচ নেতা মীর ইয়ার বালোচ এক জোরালো ঘোষণায় দাবি করেছেন যে বালোচিস্তান পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং এখন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এই বিবৃতি ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের উত্তপ্ত আবহে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
মীর ইয়ার বালোচ ভারতের প্রতি আহ্বান জানান, যেন বালোচিস্তানের একটি দূতাবাস দিল্লিতে খোলার অনুমতি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তিনি জাতিসংঘকে অনুরোধ করেন, তারা যেন বালোচিস্তানে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে অঞ্চলটি থেকে প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
হিন্দুস্তান টাইমস এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মীর ইয়ার বালোচের মতে, “বালোচিস্তান কখনই পাকিস্তানের প্রকৃত অংশ ছিল না। পাকিস্তান সেখানে দখলদার শক্তি হিসেবে অবস্থান করছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আমাদের দিল্লিতে দূতাবাস স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হোক।”
এক্স (সাবেক টুইটার) এ দেওয়া এক খোলা বার্তায় তিনি বলেন:
“বিশ্ববাসী, পাকিস্তান একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র, যার ইতিহাসে কোনও জাতিগত, সাংস্কৃতিক বা সভ্যতাগত ভিত্তি নেই। এটি ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল ভারতকে বিভক্ত করার উদ্দেশ্যে। এই বিভাজনই ৭৭ বছরের সংঘাত, উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিয়েছে।”
মীর ইয়ার বালোচ বলেন, পাকিস্তান আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল রাখতে ধর্মীয় উগ্রতা ও জিহাদ ব্যবহারের নীতি গ্রহণ করেছে এবং ভারতের মুসলিম জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ১৯৪৮ সালের ২৭ মার্চ বালোচ নেতারা পাকিস্তানের অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সে সময় নিরব থেকেছে।
তিনি বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে বলেন:
“আমরাই পাকিস্তানের উগ্র সামরিক দখলের প্রথম শিকার। পরবর্তীতে বাংলাদেশ—একটি মুসলিম রাষ্ট্র—পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার শিকার হয়। ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা এবং দুই লক্ষ নারীকে ধর্ষণের মাধ্যমে পাকিস্তান নিজের আসল চেহারা দেখিয়েছে।”
তিনি আফগানিস্তান, ভারত এবং বিশ্বজুড়ে পাকিস্তানি জিহাদি রপ্তানির নিন্দা করে বলেন:
“রাওয়ালপিন্ডিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিরা ভারতীয় সংসদ, হোটেল, বিমানে এবং পাহেলগামের মতো পর্যটনস্থলে সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করেছে। ভারত আত্মরক্ষার অধিকার রাখে।”
বর্তমান ভারত সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন:
“ভারত এখন #OperationSindoor এর মাধ্যমে যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে তা যথার্থ ও মানবাধিকারের পরিপন্থী নয় বরং একমাত্র ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ। বালোচ, পশতুন, সিন্ধি ও কাশ্মীরি জনগণ ভারতের সুনির্দিষ্ট হামলাকে স্বাগত জানাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন:
“পাকিস্তানের উগ্রবাদী রাষ্ট্রনীতি বদলানোর একমাত্র সমাধান হল এর মানচিত্র পুনর্নির্ধারণ করা। বালোচিস্তানকে স্বাধীনতা দিতে হবে, সিন্ধকে স্বাধীনভাবে টিকে থাকতে বা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে এবং পশতুনিস্তানকে আফগানিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরকে মুক্ত করতে হবে।”
সবশেষে তিনি উল্লেখ করেন, ইরানি সমর্থিত হামাস, হিজবুল্লাহ, হাউথি বিদ্রোহীদের মতো পাকিস্তানও ভারতে ৫০০’র বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ভারত আত্মরক্ষার পূর্ণ অধিকার রাখে।
এই ঘোষণাটি এমন এক সময় এসেছে, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা তুঙ্গে। সম্প্রতি কাশ্মীর সীমান্তে সংঘর্ষ এবং পাল্টা হামলার প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
আন্তর্জাতিক মহল এই ঘটনাকে দক্ষিণ এশিয়ার ভৌগোলিক ও কূটনৈতিক সমীকরণে বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে। পাকিস্তান সরকার এখনও পর্যন্ত এই দাবির কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: খবরের সূত্র হিন্দুস্তান টাইমস এবং এক্স- এই বিবৃতি মীর ইয়ার বালোচের এক্স- এ দেয়া নিজস্ব মত এবং কোনও দেশের সরকারি অবস্থান, বা ওটিএন বাংলার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে না।)