আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের শক্তিশালী গণমাধ্যম ডন পত্রিকায় সম্পাদকীয় করা হয়েছে, “Awami League ban”
সম্পাদকীয় কলামটির বাংলা ভার্সন নিচে তুলে ধরা হলো
শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সরকারের পতন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বেসামরিক প্রশাসনের গঠনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের যে আশা তৈরি হয়েছিল, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো সেই আশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা এবং দলটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত উদ্বেগজনক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ যত গুরুতরই হোক না কেন, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য অংশগ্রহণমূলকতা অপরিহার্য। বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং জনগণের সঙ্গে গভীর সংযোগ রয়েছে — এই দলটিকে রাজনৈতিক পরিসর থেকে মুছে ফেলা বাস্তবতা বিবর্জিত। দলটি এখনও একটি বড় রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং বিশাল জনসমর্থনের অধিকারী। নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার থেকে এই দলকে বঞ্চিত করা বাংলাদেশের ভঙ্গুর গণতন্ত্রকে ঝুঁকিতে ফেলবে এবং দেশের একটি বড় অংশের ভোটাধিকার হরণ করবে।
এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতায় ভারতের হয়তো নিজস্ব স্বার্থ থাকতে পারে, তবে বাস্তবতা হলো — একটি বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করলে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আরও দৃঢ় হবে এবং রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর হবে। এই সময়ে এখন জাতীয় ঐক্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে, ঢাকা কি তার অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারে কিনা।
অন্তর্বর্তী সরকারকে মনে রাখতে হবে, তাদের প্রধান দায়িত্ব হলো শান্তিপূর্ণ ও বৈধ ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্য কখনোই অর্জিত হবে না যদি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে দমন করা হয় — ব্যালটের মাধ্যমে নয়।
ড. ইউনুসকে তার গণতান্ত্রিক আদর্শে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে — এবং তা নিশ্চিত করতে হবে যে, আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দল সমান সুযোগে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। একটি নির্ধারিত নির্বাচনকাল প্রকাশ করা এবং সকল রাজনৈতিক শক্তির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা কেবল ভবিষ্যতের সরকারকে বৈধতা দেবে না, বরং সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কাও কমাবে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হতে হবে ব্যালট বাক্সে — আদালতের কাঠগড়ায় বা রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় নয়।
ডন পত্রিকায় প্রকাশিত, ১৫ মে ২০২৫