মেলবোর্ন, ১৯ মে- একই ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান হিসেবে দেখতে চায় না বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এছাড়াও একজন ব্যক্তির সারাজীবনে ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার পক্ষেও দলটির অবস্থান।
রবিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে ‘ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে’র এমন প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
সংলাপের মধ্যভাগে বিরতিতে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে জানান দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
তাহের জানান, সংলাপে দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর নজর রাখতে টাস্কফোর্স গঠন ও নির্বাচন কমিশনারদের চাকরিকালীন সময়ের পরও তাদের আইনের আওতায় আনার বিধানও চেয়েছেন তারা।
এদিন তাহেরের নেতৃত্বে জামায়াতের ১১ সদস্যর একটি প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ ছাড়াও সংলাপে অংশ নেন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার ও ইফতেখারুজ্জামান।
বৈঠকের মধ্যভাগে তাহের সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা বলেছি একজন ব্যক্তি একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং সেই দলের প্রধান থাকতে পারবেন না। এরকম উদাহরণ পৃথিবীর বহু দেশে আছে। আমাদের পাশের দেশ ভারত, আমেরিকা সবখানে আছে। সারা দুনিয়াতে এই ব্যালেন্স অব পাওয়ারটা আছে।”
তিনি আরও বলেন, “এছাড়াও একজন ব্যক্তি সারাজীবনে ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না বলে আমরা মতামত দিয়েছি। গত বৈঠকেও আমরা এই বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছিলাম। আজকে আমরা এটিকে আরও স্পষ্ট করে আলোচনা করেছি।”
বিএনপির সাবেক শরিক দলটির এমন প্রস্তাব মেনে নিলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর সরকার প্রধান হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এর কারণ, তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে ১০ বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন।
তাহের জানান, তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু কারা সেই ফোর্সে থাকবেন সেটা এখনো বিস্তারিত আলোচনা হয়নি।
তিনি বলেন, “আজকে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি রিপোর্টের ওপর আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, দুর্নীতি দমন কমিশন অনেক সময় দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে সবার কাছে চিহ্নিত হয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি, যেটি দুর্নীতি দমন কমিশনের ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করবে। কমিশনের কেউ দুর্নীতিতে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করবে। আমাদের এই প্রস্তাবের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও একমত হয়েছেন।”
বৈঠকে নির্বাচন কমিশনাররা চাকরিতে না থাকার সময় তাদের তাদের শাস্তি বিধান নিয়েও আলোচনা করেছে জামায়াতের প্রতিনিধিদল। তাহের বলেন, “গত ১৫ বছর বা তার আগেও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ছিলো সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু অনেকেই সেটি করেননি। এটির অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনারদের ত্রুটি, বিচ্যুতির জন্য খুব বেশি শাস্তির বিধান নেই। নির্বাচন কমিশনারদের চাকরিকালীন সময়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল তাদের ওপরে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারে। কিন্তু আমরা বলছি নির্বাচন কমিশনারদের চাকরি চলে যাওয়া বা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যাতে তাদের আইনের আওতায় আনার বিধান থাকে। এজন্য প্রয়োজনীয় আইনের সংশোধন করা দরকার।”
জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ-এনসিসি গঠনের বিষয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, “আমরা এনসিসি গঠনের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত। কিন্তু যে ফরম্যাট দেওয়া হয়েছে সেখানে আমরা কিছু সংশোধনী এনেছি। মূলত প্রধান বিচারপতি এবং রাষ্ট্রপ্রধানকে তারা বডির ভেতরে প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু আমরা বলেছি, তাদের এখান থেকে দূরে রাখতে হবে। কারণ, কোনো জরুরি সংকট তৈরি হলে যাতে সমাধানের জন্য তাদের কাছে মানুষ যেতে পারে।”