মেলবোর্ন, ১৯ মে- যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (বয়স ৮২) প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন, এবং ক্যানসার ইতোমধ্যে তার হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বলে রোববার তার দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
বাইডেন, urinary সমস্যার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে গিয়ে গত শুক্রবার ক্যানসারের বিষয়টি জানতে পারেন বিশেষজ্ঞদের মতে, বাইডেনের ক্যানসারটি ‘অ্যাগ্রেসিভ’ বা আক্রমণাত্মক ধরনের, যার গ্লিসন স্কোর ৯/১০ — অর্থাৎ এটি উচ্চ মাত্রার ক্যানসার এবং দ্রুত ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। যুক্তরাজ্যের ক্যানসার রিসার্চ সংস্থার তথ্যমতে, এ ধরনের ক্যানসার দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, বাইডেনের দপ্তরের বিবৃতি অনুযায়ী, ক্যানসারটি হরমোন-সেন্সিটিভ, অর্থাৎ হরমোন থেরাপির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতে পারে। বাইডেন ও তার পরিবার বর্তমানে চিকিৎসা পদ্ধতি পর্যালোচনা করছেন।
২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে স্বাস্থ্যগত ও বয়সজনিত কারণে বাইডেন সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বেশি বয়সে দায়িত্ব পালনকারী প্রেসিডেন্ট।
গত বছরের জুনে, রিপাবলিকান প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক বিতর্কে দুর্বল পারফরম্যান্সের কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন বাইডেন। পরে ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে তার পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।
বাইডেনের নিজের পরিবারও ক্যানসারের ক্ষত বহন করেছে— ২০১৫ সালে তার বড় ছেলে বো বাইডেন ব্রেইন ক্যানসারে মারা যান। ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাইডেন অনেক দিন ধরেই সোচ্চার। ২০২২ সালে তিনি ও স্ত্রী জিল বাইডেন পুনরায় চালু করেন “ক্যানসার মুনশট” উদ্যোগ, যার লক্ষ্য ২০৪৭ সালের মধ্যে ৪ মিলিয়নের বেশি ক্যানসার মৃত্যু রোধ করা।
আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রোস্টেট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ড. উইলিয়াম ডাহুট বিবিসিকে জানান, বাইডেনের ক্যানসারটি যেহেতু হাড়ে ছড়িয়েছে, একে সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য ধরা হয় না। তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, “প্রাথমিক চিকিৎসায় সাধারণত ভালো সাড়া মেলে এবং অনেকে এই রোগ নিয়েই বহু বছর বাঁচেন।”
তিনি বলেন, বাইডেনের ক্ষেত্রে হরমোন থেরাপি দেওয়া হতে পারে, যা ক্যানসারের বিস্তার কমাতে সহায়তা করবে এবং উপসর্গগুলো প্রশমিত করবে।
হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর বাইডেন অনেকটাই জনদৃষ্টির বাইরে চলে যান। তবে গত এপ্রিল মাসে তিনি শিকাগোয় এক প্রতিবন্ধী অধিকার সংগঠনের আয়োজিত সম্মেলনে মূল বক্তৃতা দেন এবং মে মাসে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত ছিল “কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয়”।
“দ্য ভিউ” অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি হোয়াইট হাউসের শেষ বছরে মানসিক সক্ষমতা হারানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এমন কিছু ঘটেনি, যেটা এই দাবিকে সমর্থন করে।”
সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই অসুস্থতার খবর গোটা বিশ্বে উদ্বেগ তৈরি করেছে। তবে তার আশাবাদী মনোভাব এবং চিকিৎসার প্রতি আস্থা অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকছে।