মেলবোর্ন, ১৯ মে-অস্ট্রেলিয়ান বহুজাতিক ব্যাংকিং এবং আর্থিক পরিষেবা সংস্থা ওয়েস্টপ্যাক করপোরেশন বা ওয়েস্টপ্যাক ভবিষ্যদ্বাণী করছে যে, মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমানো এবং স্থিতিশীল কর্মসংস্থানের কারণে অস্ট্রেলিয়ার রিজার্ভ ব্যাংক (RBA) মঙ্গলবার সুদের হার কমানোর পদক্ষেপ নিতে পারে।
সুদের হার কমানোর ফলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং সম্পত্তির দাম আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
ওয়েস্টপ্যাকের অর্থনীতিবিদ ইলিয়ানা জেইন আশা প্রকাশ করে বলেছেন, “আমরা মনে করি, এই হার কমানো নিশ্চিত।”
এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ব্রোকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়েস্টপ্যাক আশা করছে, অফিসিয়াল ক্যাশ রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৩.৮৫% করা হবে, যা বর্তমানে ৪.১০%। জেইন বলেন, “আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তা দেখায় যে এখন হার কমানোর সময়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা মনে করি, RBA ধীরে এবং সতর্কভাবে পদক্ষেপ নেবে। কারণ এখন অনেক ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে শুল্ক নিয়ে, যা দেশের মুদ্রাস্ফীতির প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই প্রথমে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে পরে প্রয়োজনে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়াটা তাদের কৌশল হতে পারে।”
এই হার কমানো মর্টগেজ ধারকদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে এবং সম্ভাব্য ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। ফেব্রুয়ারির হার কমানোর পর থেকে অনেক ব্রোকার গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি আগ্রহ লক্ষ্য করেছেন।
তবে, এপ্রিল মাসে RBA যখন হার অপরিবর্তিত রাখে, তখন বাজারে কিছুটা হতাশা দেখা দেয়। কিন্তু এরপর থেকে মুদ্রাস্ফীতি ও কর্মসংস্থান সংক্রান্ত তথ্য পরিবর্তিত হয়েছে। এপ্রিল মাসে মুদ্রাস্ফীতি তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়েছে এবং RBA-এর লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এসেছে।
অস্ট্রেলিয়ার বেকারত্বের হার গত ১৬ মাস ধরে ৩.৯% থেকে ৪.১% এর মধ্যে রয়েছে। কিছু বিশ্লেষক আশা করছেন, ২০২৫ সালে বেকারত্বের হার বাড়তে পারে। কোরলজিক পূর্বাভাস দিয়েছে যে হার ৪.৫% পর্যন্ত বাড়তে পারে, আর NAB পূর্বাভাস দিয়েছে ৪.৪% পর্যন্ত।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার চারটি প্রধান ব্যাংকই মঙ্গলবার হার কমানোর প্রত্যাশা করছে, যদিও তারা কমানোর মাত্রা নিয়ে বিভক্ত। কমনওয়েলথ ব্যাংক (CBA), ANZ এবং ওয়েস্টপ্যাক ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর পক্ষে, তবে NAB ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর পূর্বাভাস দিয়েছে।
বিশ্ব অর্থনীতি এপ্রিলের শুরুতে উদ্বেগের মধ্যে পড়ে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ব্যাপক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন — যা ‘লিবারেশন ডে ট্যারিফ’ নামে পরিচিত। এতে বিশ্বব্যাপী সব দেশের ওপর ১০% আমদানি কর আরোপ করা হয়, যার মধ্যে অস্ট্রেলিয়াও রয়েছে। যদিও এই শুল্ক মূলত চীনকে লক্ষ্য করে দেওয়া হয়েছিল। তবুও এই ঘোষণায় বিশ্ববাজারে ধস নামে এবং মন্দার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এতে RBA-এর ওপর দ্রুত হারের কাটছাঁটের চাপ তৈরি হয়।
তবে মে মাসে দুই পরাশক্তির মধ্যে এক শান্তিচুক্তি হওয়ায় অনেক অর্থনীতিবিদ তাদের পূর্বাভাস পুনর্বিবেচনা করেন।
জেইন বলেন, “যদি আপনি দেখেন, অন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো কী করছে, বিশেষ করে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ, তারা বেশ সতর্কভাবে এগোচ্ছে এবং এটাই পুরো প্রেক্ষাপট নির্ধারণ করে দিচ্ছে। এটা প্রথম হার হ্রাস, তবে নীতিমালা শিথিল করার ক্ষেত্রে তারা ধীরে এগোবে।”