মেলবোর্ন, ২৩ মে- গুঞ্জনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ করার আগ্রহের কথা নিশ্চিত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বৈঠক করার পর বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন এমন খবর পেয়েই নাহিদ ও তার দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তার সঙ্গে দেখা করেন।
বিবিসি বাংলাকে নাহিদ বলেন, সকাল থেকে ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জনের বিষয়ে শুনেছেন। সে বিষয়ে কথা বলতেই গিয়েছিলেন তারা।
এনসিপি নেতা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারবেন না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “স্যার বলছেন আমি যদি কাজ করতে না পারি… যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে আনছিলা একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর। দেশের পরিবর্তন, সংস্কার…। কিন্তু যেই পরিস্থিতি যেভাবে আন্দোলন বা যেভাবে আমাকে জিম্মি করা হচ্ছে।”
“আমি তো এভাবে কাজ করতে পারবো না। তো রাজনৈতিক দলগুলো তোমরা সবাই একটা জায়গায়, কমন জায়গায় না পৌঁছাতে পারে।”
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের তিন দিন পর ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। সেই সরকারে যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
পরে নাহিদ সরকার থেকে পদত্যাগ করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করা এনসিপির নেতৃত্ব নেন।
এই সরকার শুরু থেকেই সংস্কারের কথা বলে আসছে, তবে সরকারের দশম মাসে এসে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ভাষা পাল্টে গেছে। নেতারা সরাসরি সরকারকে প্রশ্ন রাখছেন, কী সংস্কার হয়েছে?
বিএনপি একাধিকবার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে সুনির্দিষ্ট জবাব না পেয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, এই দাবি পূরণ না হলে ডিসেম্বরের পর তারা সরকারকে আর সহযোগিতা করবে না।
নানামুখী আন্দোলনের কারণে রাজধানীতে কর্মদিবসে যে যানজট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যাতে মানুষের বিরক্তি স্পষ্ট। সরকার কোনো কিছুর ব্যবস্থাপনায় মুন্সিয়ানা দেখাতে পারছে না, এমন অভিযোগ উঠছে।
দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতিও ভালো না, সরকারি পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে বেকারত্ব বেড়ে চলেছে।
আবার সেনা সদরে কর্মকর্তাদের এক বৈঠকের খবর এসেছে সংবাদ মাধ্যমে, যেখানে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সেনাপ্রধান নির্বাচিত সরকার দেখতে চেয়েছেন।
সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য আসার পরদিন সামাজিক মাধ্যম এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও লেখা হচ্ছে ইউনূস পদত্যাগের কথা ভাবছেন। কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত অবশ্য দেওয়া হচ্ছে না।
নাহিদ জানান, প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগের মতো সিদ্ধান্ত না নিতে তারা আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়ে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমাদের গণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও দেশের ভবিষ্যৎ সবকিছু মিলিয়ে উনি যাতে শক্ত থাকেন। এবং সবগুলা দলকে নিয়ে যাতে ঐক্যের জায়গায় থাকেন। সবাই তার সাথে আশা করি সহযোগিতা করবেন।”
প্রধান উপদেষ্টা কেন পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন, এই প্রশ্নে এনসিপি নেতা বলেন, “হ্যাঁ যদি কাজ করতে না পারেন, থাকবেন, থেকে কী লাভ?”
“উনি বলছেন উনি এ বিষয়ে ভাবতেছেন। ওনার কাছে মনে হয়েছে পরিস্থিতি এরকম যে তিনি কাজ করতে পারবেন না।”
এনসিপিও সরকারের তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছে। এরা হলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
অন্যদিকে বিএনপি নেতা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। পরে বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ‘বিতর্কিত উপদেষ্টাদের’ পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিএনপি নেতার বক্তব্যে নাম না থাকলেও বক্তব্যের ভঙ্গিতে এটা স্পষ্ট যে তারাও আসিফ ও মাহফুজের পদত্যাগ চেয়েছে।
বিএনপি নেতা বলেন, “যে সমস্ত উপদেষ্টাগণ একটি নূতন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত বলে সবাই জানে ও বোঝে; উপদেষ্টা পরিষদে তাদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয় নিরপেক্ষ পরিচিতিকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে বলেই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদেরকে অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন।”
এরই মধ্যে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে পূর্বের যে কোনো বিভাজনমূলক বক্তব্য ও শব্দচয়নের কারণে দুঃখপ্রকাশ করেছেন।