মেলবোর্ন, ২৪ মে— বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে বাধাগ্রস্ত করে আরেকটা এক-এগারো তথা ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার পাঁয়তারা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
শুক্রবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি একথা বলেন।
তিনি লেখেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিকে সকল প্রকার আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত করে স্বাধীন ও সার্বভৌমভাবে পরিচালনা করাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশকে বারবার বিভাজিত করা হয়েছে, জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করা হয়েছে, বাংলাদেশেকে দুর্বল করে রাখার লক্ষ্যে।
“আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পর থেকে আবারো দিল্লি থেকে ছক আঁকা হচ্ছে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার, দেশকে বিভাজিত করার। গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে বাধাগ্রস্ত করে আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে।”
২০০৬ সালের শেষ ভাগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা-হানাহানির আপাত অবসান ঘটে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের জরুরি অবস্থা জারি করার মধ্যে দিয়ে। একইসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দেন তিনি। বাতিল করা হয় ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন।
এরপর সেনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত হয় নতুন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’, যার প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদ। এই সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন দেয়, আবার দেশে গণতন্ত্রে ফেরে।
১১ জানুয়ারি ক্ষমতার পালাবদলের পর জরুরি ক্ষমতার আওতায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হয়েছিল। গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াসহ বহু রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং শীর্ষ ব্যবসায়ী। দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অসংখ্য মামলা দেওয়া হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে।
শুরুতে দেশের মানুষ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন করলেও এক সময় তা কমে আসে এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি বাড়তে থাকে। আলোচিত-সমালোচিত সেই ঘটনাপ্রবাহের শুরুর দিনটি পরিচিতি পায় ‘ওয়ান ইলেভেন’ নামে।
নাহিদ এমন এক সময়ে সেই ওয়ান-ইলেভেনের প্রসঙ্গ ফিরিয়ে আনলেন যখন নির্বাচনসহ বেশ কিছু প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সেনাপ্রধানের মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এনসিপি নেতা বলেন, “ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক, বাংলাদেশপন্থি ও ধর্মপ্রাণ ছাত্র-জনতাকে সার্বভৌমত্ব, সংস্কার ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
“দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার ও সৈনিকদের সার্বভৌমত্ব ও বাংলাদেশ রক্ষায় প্রস্তুত থাকতে হবে।”
নাহিদের একই পোস্ট এনসিপির ফেইসবুক পেইজেও এসেছে, যেখানে বেশ কিছু বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেছেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এ ছাত্রনেতা বলছেন, “ড. ইউনূসকে জনগণকে দেওয়া সংস্কার, বিচার ও ভোটাধিকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। উনাকে দায়িত্বে থেকেই রাজনৈতিকভাবে সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে।
“জুলাই ঘোষণাপত্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দিতে হবে। ঘোষিত টাইম ফ্রেমের মধ্যেই নির্বাচন হবে। নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কারের জুলাই সনদ রচিত হবে। নির্বাচনের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হবে এবং বিচারের রোডম্যাপ আসতে হবে। নতুন সংবিধানের জন্য গণপরিষদ ও আইনসভার নির্বাচন একসঙ্গে দিতে হবে।”