মেলবোর্ন, ২৪ মে—২০১৬ সালে কিম কার্দাশিয়ানের উপর সংঘটিত সশস্ত্র ও সহিংস ডাকাতির মামলায় ফ্রান্সের একটি আদালত আটজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। বাকি দুই আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
তবে এই আটজনের কেউই কারাদণ্ড ভোগ করবেন না। আদালত তাঁদের বয়স, বিচারপূর্ব আটককালীন সময় এবং অপরাধ সংঘটনের পর বিচার শুরু হতে নয় বছর বিলম্ব হওয়াকে বিবেচনায় রেখে এ সিদ্ধান্ত দেয়।
কার্দাশিয়ানের প্রতিক্রিয়া
রিয়েলিটি টিভি তারকা কিম কার্দাশিয়ান এক বিবৃতিতে বলেন, “এই ঘটনা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। এটি আমার ও আমার পরিবারের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছে। তবে আমি বিশ্বাস করি উন্নয়ন ও জবাবদিহির শক্তিতে এবং প্রার্থনা করি সকলের নিরাময়ের জন্য।”
তিনি আরও বলেন, “আমি ফ্রান্সের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই, যারা এই মামলায় ন্যায়ের পক্ষে কাজ করেছে। আমি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও সুবিচার নিশ্চিত করতে সক্রিয় থাকব।”
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর, প্যারিস ফ্যাশন উইকের সময় হোটেল দ্য পোর্তালেসে পুলিশবেশে ছদ্মবেশধারী ডাকাতরা প্রবেশ করে কিম কার্দাশিয়ানকে বন্দুকের মুখে জিম্মি করে, বিছানায় ফেলে, তার হাত-পা টাই দিয়ে বেঁধে প্রায় ১৩ মিলিয়ন ডলারের গয়না লুট করে পালিয়ে যায়।
ডাকাতির ঘটনায় মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারী ডাকাতি ও সংঘবদ্ধভাবে অপহরণের অভিযোগ আনা হয়। এদের মধ্যে দুইজন খালাস পেয়েছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে প্রধান পরিকল্পনাকারী আওমার আইত খেদাচে (ডাক নাম “ওমর দ্য ওল্ড”) আট বছরের সাজা পেয়েছেন, যার মধ্যে পাঁচ বছর স্থগিত। আরও তিনজন সাত বছরের সাজা পেয়েছেন, যার পাঁচ বছর স্থগিত।
বিচারপতি ডেভিড দে পাস বলেন, আসামিদের বয়স—যাদের কেউ ৭৯ বছর, কেউবা ষাটোর্ধ্ব—এবং বিচার বিলম্ব আদালতের রায়ে প্রভাব ফেলেছে। তিনি স্বীকার করেন যে, কিম কার্দাশিয়ান এই ঘটনায় চরমভাবে আতঙ্কিত হয়েছিলেন। “আপনারা ভয় সৃষ্টি করেছেন, ক্ষতি করেছেন,” তিনি বলেন।
মামলায় খেদাচের ডিএনএ একটি টাইয়ে পাওয়া যায়, যা কার্দাশিয়ানের হাত বাঁধতে ব্যবহার করা হয়েছিল। এটাই মামলার মোড় ঘোরাতে সাহায্য করে। টেলিফোনে তাকে সহযোগী নিয়োগ দিতে ও হীরা বেলজিয়ামে বিক্রি করতে শোনা যায়। পালানোর সময় একটি হীরা বসানো ক্রস পড়ে যায়, সেটিই একমাত্র উদ্ধার হওয়া গয়না।
খেদাচে নিজেকে “সামান্য কর্মী” দাবি করে দায় দেয় এক রহস্যময় “এক্স” বা “বেন” নামের ব্যক্তির ওপর, যিনি বাস্তবে ছিলেন না বলে প্রসিকিউশন জানায়। কার্দাশিয়ান আদালতে খেদাচের লেখা চিঠি শুনে তাকে ক্ষমা করেন, তবে বলেন, “এই চিঠি আমার ট্রমা বা অনুভূতিগুলো পাল্টায় না।”
কার্দাশিয়ান বলেন, ডাকাতির রাতে তিনি নিশ্চিত ছিলেন তিনি মারা যাবেন। তিনি বলেন, “আমার ছোট বাচ্চারা আছে। আমি শুধু ওদের কাছে ফিরতে চেয়েছি। ওরা সব কিছু নিতে পারে, আমি শুধু বাঁচতে চেয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, আগে প্যারিস ছিল তাঁর শান্তির আশ্রয়। ভোর ৩টায় তিনি শহরের পথে হাঁটতেন, জানালায় তাকাতেন, হট চকলেট খেতেন। কিন্তু এখন সেই ভাবনা চূর্ণ হয়ে গেছে।
এই ঘটনার পর কার্দাশিয়ান তাৎক্ষণিকভাবে নিজের লোকেশন শেয়ার বন্ধ করে দেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিলাসবহুল জীবন প্রদর্শন হ্রাস করেন এবং দীর্ঘ সময় প্যারিসে যাননি।
সূত্র: এপি, বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ফ্রান্স ২৪