মেলবোর্ন, ২৫ মে- ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন, ‘বিতর্কিত’ উপদেষ্টাদেরকে বাদ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পুনর্গঠনসহ বিএনপি যেসব দাবি তুলে ধরেছে, সরকারের তরফে সেসব দাবির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য পায়নি দলটি।
শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাসহ যারা সরকারের তরফে উপস্থিত ছিলেন, তারা কেউ এসব দাবির বিষয়ে আশ্বাসও দেয়নি।
বৈঠক থেকে বের হয়ে সংবাদকর্মীদের প্রশ্নে এসব কথা জানান বিএনপি নেতারা।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদের খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে আরও তিন সদস্য আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহ উদ্দিন আহমদ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢোকেন।
রাত সাড়ে ৮টার পর তারা বের হয়ে আসেন। সেখানে সংবাদকর্মীরা আগে থেকেই অপেক্ষা করে ছিলেন।
শুরুতে বিএনপি নেতারা জানান ধরেন তারা কী কী দাবি তুলে ধরেছেন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন চারটি দাবির কথা তুলে ধরেন। সেটি হলো ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, নির্বাচনি সুষ্পষ্ট রোডম্যাপ, ‘বিতর্কিত’ উপদেষ্টাদের পদত্যাগ এবং আওয়ামী লীগের বিচার।
তবে বিচার ও সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া জানিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এলেও তা চালিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
বিএনপি রোডম্যাপের আশ্বাস পেয়েছেন কি না- এক সংবাদকর্মীর প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ যা যা বলেন, তাতে প্রশ্নের জবাব ছিল না।
পরে এক সংবাদকর্মী বলেন, “নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে তার মানে কোনো আশ্বাস পাননি?”
তখন সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “এ রকম কথা হয় নাই। উনি সুনির্দিষ্ট জানান নাই। আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি, হয়তোবা উনারা উনাদের প্রেসের মাধ্যমে জানাবেন। সেজন্য আমরা অপেক্ষা করব।”
আপনারা কি এই আলোচনায় সন্তুষ্ট? – এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন অন্য এক সংবাদ কর্মী।
জবাবে বিএনপি নেতা বলেন, “’এখনই প্রতিক্রিয়া জানানোর দরকার নাই। উনাদের প্রেস সেকশন কী বলে, তারপরে প্রতিক্রিয়া দেব….উনার প্রেসকে আগে কথা বলতে বলবেন, তারপরে।
এ সময় পাশ থেকে আমীর খসরু লেন, “আমি একটু যোগ করি। মূলত সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন এই তিনটার উপর আলোচনা হয়েছে। এবং সংস্কারের ব্যাপারে আমরা এইটা পরিষ্কার এবং উনারাও একমত হয়েছে যে সংস্কার যেখানে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে হওয়ার কথা, তার ভিত্তিতে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে এবং তা অতি সহসা সম্পন্ন করা সম্ভব। এখানে কোনো দ্বিমত পোষণ করেননি।
“বিচার ব্যবস্থা বিচার বিভাগ করবে এবং বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে যে আলোচনা হয়েছে সেখানে কোনো দ্বিমত নাই। সুতরাং ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করা সম্ভব এ আলোচনাও হয়েছে।”
উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে সালাউদ্দিন বলেন, “নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও দুজন ছাত্র উপদেষ্টা, যাদের কারণে এই সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে তাদেরকে বাদ দেওয়ার জন্য জন্য লিখিতও দিয়েছি, মুখেও বলেছি।”
প্রধান উপদেষ্টা কি আশ্বাস দিয়েছেন?- প্রশ্ন করলে জবাব আসে, “সেই আশ্বাস তারা দেখবেন, আমরা আমাদেরটা বলেছি।”
আরেক প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, “ডিসেম্বরের আগে নির্বাচনের আশ্বাস না দিলেও, ডিসেম্বরের আগে যে নির্বাচন হতে পারে সেই আলোচনা হয়েছে আজকে।”
‘নির্বাচনের দেরি হলে স্বৈরাচার ফিরবে’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, তারা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে গণতন্ত্র উত্তরণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা।
“যে কোনো উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে আমরা মনে করি জাতির কাছে আবার স্বৈরাচার পুনরায় ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে”, বলেন তিনি।
এর দায় দায়িত্ব বর্তমান সরকার এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের উপরে বর্তাবে বলেও সতর্ক করেন বিএনপি নেতা।
মোশাররফ বলেন, তাদের দলের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে বলা হয়, দলটি কখনও তার পদত্যাগ চায়নি, বরঞ্চ প্রথম দিন থেকেই এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে সেই তৃণমূল পর্যন্ত সবচেয়ে বিক্ষুব্ধ বলেও জানানো হয় বিএনপির তরফে।
বিএনপির সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রধান উপদেষ্টা কথা বলেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের সঙ্গে।
এরপর জাতীয় নাগরিক পার্টির চার নেতা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আরিফুল ইসলাম আদীব ও তাসনিম জারা।
গত বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যখন গুঞ্জন ওঠে যে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করেছেন, সেদিন সন্ধ্যায় নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী যমুনায় যান।
এক ঘণ্টার বৈঠকে তারা প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগ না করার আহ্বান জানান বলে বিবিসি বাংলায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এই পরিস্থিতিতে জামায়াতের আমির প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানান। রবিবার সেই বৈঠক আহ্বান এবং আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন এবি পার্টির নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জু। তার আগে তিনটি দলের সঙ্গে এই বৈঠক করলেন প্রধান উপদেষ্টা।