মেলবোর্ন, ২৫ মে— ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ নিতে হাইকোর্টে রিট করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
রবিবার ইশরাকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন এ রিট দায়ের করেন। রিটে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনকারীকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণে বিবাদীর নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯’ এর ধারা ৭(২) অনুসারে আবেদনকারীকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের জন্য বিবাদীকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেটের বৈধতা নিয়ে এবং শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। এ আদেশের ফলে ইশরাক হোসেনের শপথ দিতে বাধা নেই বলে জানান তার আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের আদেশের পর ইশরাকের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছিলেন, গড়িমসি না করে এখন সরকারের দায়িত্ব ইশরাক হোসেনের শপথের ব্যবস্থা করা। হাইকোর্টের আদেশের পরও শপথ না পড়ালে সেটা হবে আদালত অবমাননা। আমরা আশা করি সরকার কোনো ধরনের কালক্ষেপণ না করে ইশরাক হোসেনের শপথের ব্যবস্থা করবে।
আদালতে ইশরাকের পক্ষে শুনানি করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন ও কায়সার কামাল। তাদের সহযোগিতা করেন আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান ও মাকসুদ উল্লাহ। রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে। এরপর শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস।
সেই নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া।
ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে সমর্থকরা। নগর ভবন অবরোধ করে ওই আন্দোলনে ভোগান্তি হয় সেবাগ্রহীতাদের। পরে সেই অবরোধ আসে মৎসভবনের সামনে।
ইশরাককে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দিতে বিলম্বের জন্য স্থানীয় সরকার আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে দায়ী করছে বিএনপি। শনিবার প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে আসিফসহ আরও দুই উপদেষ্টার অপসারণ চেয়েছে দলটি।
গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম।
আদালত ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে গেজেট প্রকাশের দিন ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে আইনি নোটিশ দেন রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামে দুই ব্যক্তি। নোটিশে গেজেট প্রকাশ এবং ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
পরে মামুনুর রশিদ হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে গত ২৭ মার্চের রায় এবং ২৭ এপ্রিলের গেজেট কেন বাতিল ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং ইশরাক হোসেনকে শপথ পরিচালনা থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয় রিটে।