মেলবোর্ন, ২৬ মে— বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পরিচালকের কক্ষে ঢুকে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন জুলাই আন্দোলনে দৃষ্টিশক্তি হারানো চার যুবক।
পুনর্বাসন ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে রবিবার দুপুরে হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে একটি বৈঠক চলাকালে তারা বিষ পান করেন।
বিষপানকারীরা হলেন- শিমুল, মারুফ, সাগর ও আখতার হোসেন (আবু তাহের)। পরে দ্রুত তাদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তারা শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
এ বিষয়ে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক আবুল খায়ের বলেন, “জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) সঙ্গে চলমান বৈঠকের সময় ওই চারজন দাবি নিয়ে আমার কক্ষে যান। সিইও তাদের অপেক্ষা করতে বললে ক্ষুব্ধ হয়ে সেখানেই বিষপান করেন তারা।”
তিনি আরও বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের কাছে আগে থেকেই বিষ ছিল।”
পরিচালক বলেন, “জুলাই গণ-আন্দোলনে চোখ হারানো আহতরা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ নয় মাসেও তাদের উন্নত চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং প্রতিশ্রুতি দিয়ে নানা বাহানা করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বললেও তা বাস্তবে ঘটেনি।”
“আমরা তাদের পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। তারা বার বার তাদের নিরাপত্তাহীনতার কথা বলছে। তাদের চিকিৎসার কোনো ত্রুটি নেই। তাদের মধ্যে দুইজনকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়েছিল সরকারের তরফ থেকে। কিন্তু তাদের দৃষ্টি ফেরানো সম্ভব হয়নি। কারণ গুলি তাদের চোখকে এমনভাবে আঘাত করেছে যে তারা আর কখনও দেখতে পারবে না।”
তিনি বলেন, এই চার যোদ্ধা দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে আছে। তবে চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট কাজের জন্য তাদের হাসপাতালে থাকার কোনো প্রয়োজন এখন আর নেই। কিন্তু তারা তাদের বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। এদের মধ্যে চাঁদপুরে একজনের বাড়ি ঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। তাই তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।”
মানসিক স্বাস্থ্যের অবণতির কারণে তারা বিষপান করেছে বলে মনে করেন আবুল খায়ের।
তিনি জানান, তাৎক্ষণিক তাদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন।
রাত আটটার দিকে এবিষয়ে শের-বাংলা নগর থানার ডিউটি অফিসার এসআই অমৃতা দত্ত বলেন, “আমরা এ বিষয়ে এখনও কোনো খবর পাইনি। তাই বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।”
চার ‘যোদ্ধা’র বিষপান কঠিন মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা: জুলাই ফাউন্ডেশন
এদিকে ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে জুলাই আন্দোলনে আহত চারজনের বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টাকে ‘কঠিন মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা’ বলে মন্তব্য করেছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। একইসঙ্গে ফাউন্ডেশন জুলাই যোদ্ধাদের পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছে।
রবিবার রাতে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা বলা হয়।

এতে বলা হয়, “জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও লে. কর্নেল (অব.) কামাল আকবার ও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালকের সঙ্গে এক বিশেষ মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় জুলাই যোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা, সামাজিক মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ জীবনমান নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়। দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে তাদের নানাবিধ সমস্যা, উদ্বেগ এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা করা হয়।”
আলোচনার লক্ষ্য তুলে ধরে বলা হয়, “জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি কোনো প্রকার অবহেলা বা অবমূল্যায়ন যেন না হয়, তা নিশ্চিত করা ছিল এই আলোচনার মূল লক্ষ্য। সভায় তাদের জীবনমান উন্নয়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবও গৃহীত হয়।”
বিষপানের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে জুলাই ফাউন্ডেশন বলছে, “ঠিক সেই মুহূর্তেই একটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক খবর আসে। জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে চারজন ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম হতাশা, দুশ্চিন্তা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে নিজেদের জীবনের প্রতি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে বিষপান করেন। এদের মধ্যে কিছুদিন আগে বিদেশ চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছেন এমন যোদ্ধাও আছেন।”
“এ ঘটনা আমাদের হৃদয়কে গভীরভাবে আহত করেছে। এটি আমাদের সবার জন্য এক কঠিন মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা” বলা হয় বিবৃতিতে।
তাৎক্ষণিক তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে দাবি করে বলা হয়, “জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে আক্রান্ত যোদ্ধাদের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।”
ফাউন্ডেশনের সিইও লে. কর্নেল (অবসর প্রাপ্ত) কামাল আকবার নিজে উপস্থিত থেকে বাকি যোদ্ধাদের আশ্বস্ত করেছেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “জুলাই যোদ্ধারা আমাদের অহংকার। তাদের মনোবল যেন ভেঙে না পড়ে, সে জন্য ফাউন্ডেশন প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। চিকিৎসা, পুনর্বাসন, ও সামাজিক স্বীকৃতি নিয়ে ফাউন্ডেশন সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ করছি। আমাদের প্রতিটি যোদ্ধা যেন সাহসিকতার সঙ্গে জীবনের সঙ্গে লড়াই করতে পারে, সে জন্য আমরা তাদের পাশে আছি ও থাকব।”
তিনি আরও বলেন, “এই মুহূর্তে আমাদের দরকার আরও সহানুভূতি, মানবিকতা ও সচেতন উদ্যোগ। এই সাহসী যোদ্ধারা যেন কখনোই আর নিজেরা একাকী মনে না করেন—এই বার্তাই হোক আজকের দিনের অঙ্গীকার।”