মেলবোর্ন, ২৬ মে— মেলবোর্নের নর্থল্যান্ড শপিং সেন্টারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাংয়ের পরিকল্পিত সংঘর্ষে তিনজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রেস্টনের এই শপিং সেন্টারে গতকাল বিকেলে দুই গোষ্ঠীর কিশোরদের মধ্যে মাচেটি নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এক ১৬ বছর বয়সী (ডারেবিন) এবং ১৫ বছর বয়সী (মেলটন) কিশোরকে পুলিশ আটক করে। আজ সকালে তাদের বিরুদ্ধে মারামারি, ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করা, নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র রাখার ও ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয় এবং শিশু আদালতে হাজির করা হয়। একজন ২০ বছর বয়সী ব্যক্তি মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং তার অবস্থা এখনও সংকটজনক।

ভিক্টোরিয়া পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ডেভিড ক্লেটন জানান, সংঘর্ষে কোনও নিরীহ পথচারী আহত হননি। আজ সকালে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়—একজন ১৮ বছর বয়সী (বুন্ডুরা) এবং একজন ২০ বছর বয়সী (থর্নবুরি)। প্রথমজনের বিরুদ্ধে মারামারি ও ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং দ্বিতীয়জনের বিরুদ্ধে জামিনে থাকাকালীন অপরাধ, মারামারি ও আঘাত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের দুজনকেই আগামী ১৫ জুলাই হাইডেলবার্গ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজিরা দেওয়ার জন্য জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, সংঘর্ষে জড়িত বাকি চারজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং যাদের ধরা হয়নি, তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে। ক্লেটন বলেন, “এটি দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কিশোর গ্যাংয়ের পূর্বপরিকল্পিত সংঘর্ষ।”
ঘটনার পরপরই তিনটি চাপাতি উদ্ধার করে পুলিশ।
ভিক্টোরিয়া রাজ্যের প্রিমিয়ার জাসিন্তা অ্যালান বুধবার থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যব্যাপী চাপাতি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, “এই ছুরিগুলো বিপজ্জনক অস্ত্র। এগুলোর রাস্তায় কোনও স্থান নেই।”
নর্থল্যান্ড শপিং সেন্টারের মালিক Vicinity Centres এক বিবৃতিতে জানায়, “ঘটনাটি অত্যন্ত হতাশাজনক। তবে পুলিশ দ্রুত উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন সেন্টার স্বাভাবিকভাবে চালু রয়েছে।”
পুলিশ জানায়, তদন্ত চলমান রয়েছে এবং যাদের কাছে কোনও তথ্য বা ভিডিও রয়েছে, তারা যেন Crime Stoppers-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে।
ঘটনার সময়কার একাধিক ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায় একজন ব্যক্তি বিশাল চাপাতি হাতে অন্যদের মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে। অনেকেই ছোট বাচ্চা ও প্রাম নিয়ে দৌড়াচ্ছেন। একজন মা বলেন, “ঘটনাটি ভয়ের ছিল,” অপর একজন বলেছিলেন, “সবাই প্রাণে বাঁচতে ছুটছিল।”
কিছু দোকানদার শাটার নামিয়ে দেন, কেউ কেউ আলো নিভিয়ে দোকানের ভিতরে লুকিয়ে ছিলেন।
একজন মহিলা বলেন, “মানুষ চিৎকার করছিল, দৌড়াচ্ছিল।”
ভিডিওতে দেখা যায়, লোকে সিঁড়ি বেয়ে বেরিয়ে আসছে, উপর দিয়ে হেলিকপ্টার উড়ছে। সুপারিনটেনডেন্ট কেলি লসন বলেন, “ছয় মিনিটের মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাই। তখন অনেকেই শপিং সেন্টার থেকে দৌড়ে বের হচ্ছিলেন।”
বিশেষ অপারেশন গ্রুপ, ট্যাকটিক্যাল রেসপন্স টিমসহ অসংখ্য পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এক ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই এক সন্দেহভাজনকে মাটিতে চেপে ধরে রাখেন, পরে পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানায়, সাহসিকতার জন্য ওই ব্যক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, তবে সাধারণ মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনায় না জড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এই ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।