মেলবোর্ন, ২৭ মে— রাশিয়ার ইতিহাসে ইউক্রেনের ওপর সর্ববৃহৎ বিমান হামলার পর ভ্লাদিমির পুতিনকে “একেবারে পাগল” বলার প্রতিক্রিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘আবেগের ভারে ভারাক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেছে ক্রেমলিন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রবিবার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ পোস্ট করে বলেন, “পুতিনের কিছু একটা হয়েছে। সে এখন একেবারে পাগল হয়ে গেছে, অকারণে বহু মানুষকে হত্যা করছে।”
এটি বলা হয় ইউক্রেনে রাশিয়ার চালানো ৩৬৭টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৩ জন নিহত হওয়ার পর।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “এই মন্তব্যগুলো সংশ্লিষ্ট সকলের আবেগগত ভারসাম্য হারানোর ফল।”
এদিকে, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ ঘোষণা করেছেন, ইউক্রেনে দেওয়া অস্ত্রের ওপর আর দূরত্ব সীমাবদ্ধতা নেই। এতে ইউক্রেন এখন রাশিয়ার অভ্যন্তরেও সামরিক অবস্থানে পাল্টা আঘাত হানতে পারবে।
রাশিয়ার এই সর্বশেষ আকাশ হামলা ছিল ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে পূর্ণমাত্রায় ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে সর্ববৃহৎ। ইউক্রেনের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত হামলায় ১৩ জন নিহত এবং বহু আহত হয়।
পরদিন রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত রাশিয়া আরও ৩৫৫টি ড্রোন হামলা চালায়, এতে আরও ১০ জন নিহত হন। ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানায়, এটি শুধুমাত্র ড্রোন ব্যবহার করে সবচেয়ে বড় হামলা। ক্রেমলিন জানায়, এই হামলা ইউক্রেনের “সামাজিক অবকাঠামো” লক্ষ্য করে চালানো আগের হামলার প্রতিশোধ। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের ২০টি ড্রোন গুলি করে ধ্বংস করেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, “এই হামলার কোনও সামরিক উদ্দেশ্য নেই, এটা কেবলমাত্র পুতিনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত – যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং জীবন ধ্বংস করা।”
জার্মান চ্যান্সেলর মার্জ বলেন, “এখন আর কোনও দূরত্ব সীমাবদ্ধতা নেই। ইউক্রেন এখন চাইলে রাশিয়ার অভ্যন্তরে সামরিক স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে।”
রয়টার্স জানিয়েছে, জেলেনস্কি আগামী বুধবার বার্লিন সফর করবেন, যদিও এ তথ্য এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। জার্মানির পূর্ববর্তী সরকার টরাস ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও এবার সেটি নিয়ে ঘোষণা আসতে পারে।
টরাস ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ৫০০ কিলোমিটার, যা ইউক্রেনকে অনেক বাড়তি কৌশলগত সুবিধা দিতে পারে। রাশিয়া এটিকে “বিপজ্জনক পদক্ষেপ” বলে আখ্যা দিয়েছে।
রবিবার রাতে নিউ জার্সিতে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “আমি পুতিনকে অনেকদিন ধরে চিনি, সব সময় তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল, কিন্তু সে এখন শহরে রকেট ছুড়ছে, মানুষ হত্যা করছে – এটা আমি একদমই পছন্দ করছি না।”
তিনি আরও জানান, রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছেন।
পরে ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ বলেন, “আমি সবসময়ই বলেছি, পুতিন পুরো ইউক্রেন চাই, শুধু একটা অংশ না – আর এখন মনে হচ্ছে আমি সঠিক ছিলাম। তবে সে যদি সেটি করে, তাহলে রাশিয়ার পতন অনিবার্য।”
তবে ট্রাম্প ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির বিরুদ্ধেও কড়া মন্তব্য করে বলেন, “তার কথাবার্তা নিজের দেশকে কোনও উপকার করছে না। তার মুখ থেকে যা বের হচ্ছে, তাতে শুধু সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।”
একদিকে ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আনতে প্রস্তুতি নিচ্ছে, অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, শান্তি আলোচনা সফল না হলে তারা এই উদ্যোগ থেকে সরে আসবে।
পেসকভ বলেন, “আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ আমেরিকানদের প্রতি, এবং বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি, এই শান্তি আলোচনা শুরু ও সংগঠিত করতে সাহায্য করায়।”
গত সপ্তাহে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে দুই ঘণ্টার ফোনালাপে মার্কিন প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা হয়। ট্রাম্প দাবি করেন, এই আলোচনার ফলেই রাশিয়া ও ইউক্রেন “তাৎক্ষণিকভাবে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে।”
ইউক্রেন প্রকাশ্যে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও, পুতিন কেবল “ভবিষ্যতের সম্ভাব্য শান্তির” একটি স্মারকচুক্তি তৈরির কথা বলেছেন, যা কিয়েভ ও ইউরোপীয় মিত্ররা ‘সময় নষ্টের কৌশল’ হিসেবে দেখছে।
২০২২ সালের পর প্রথমবারের মতো সরাসরি রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা হয় ১৬ মে, তুরস্কের ইস্তানবুলে।
যুদ্ধবিরতিতে কোনো বাস্তব অগ্রগতি না হলেও, গত সপ্তাহে বড় আকারের বন্দি বিনিময় কার্যকর হয়। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০% এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে দখলকৃত ক্রিমিয়াও।