মেলবোর্ন ৩০ মে – ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ‘লিবারেশন ডে’ ট্যারিফ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের আইনি লড়াই শুরু হতে যাচ্ছে। একাধিক আদালতের রায় অনুযায়ী, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ট্যারিফ আরোপ করে সংবিধানের সীমা লঙ্ঘন করেছেন বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তবে আপিল কোর্টের সাময়িক স্থগিতাদেশ নতুন আইনি সংঘর্ষের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত সম্প্রতি রায় দেয় যে, ২০২৪ সালের এপ্রিলে ট্রাম্পের আরোপ করা ট্যারিফগুলো অবৈধ এবং তিনি তাঁর নির্বাহী ক্ষমতার বাইরে গিয়েছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট কোর্ট অব আপিলস এ রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়ে শুনানি মুলতবি করেছে, যার ফলে আইনি প্রক্রিয়া এখন উচ্চ আদালতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও জননীতি বিভাগের অধ্যাপক জাস্টিন উলফার্স বলেন, “মার্কিন সংবিধানে ট্যারিফ নির্ধারণের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে। যদিও সময়ের সঙ্গে কিছু ক্ষমতা প্রেসিডেন্টকে দেওয়া হয়েছে, সেটাও সীমিত পরিসরে। ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় জরুরি অবস্থা দেখিয়ে ‘ইমারজেন্সি পাওয়ার্স অ্যাক্ট’ ব্যবহার করেছে, যেখানে ট্যারিফের কোনও উল্লেখই নেই এবং বাস্তবে কোনও জরুরি অবস্থাও নেই।”
এই ট্যারিফ ব্যবস্থা সম্পর্কে আরেকটি মামলায় একটি জেলা আদালত একই রকম মত দেয়—ট্যারিফগুলো সংবিধানসম্মত নয়। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে।
অধ্যাপক উলফার্স বলেন, “যদি আপিল কোর্ট এই ট্যারিফগুলোকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দেয়, তবে এগুলো বাতিল হবে। কিন্তু আমি আশঙ্কা করছি, হোয়াইট হাউজের আইনজীবীরা হয়তো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরির নতুন পথ খুঁজে বের করবেন।”
প্রশ্ন উঠছে, এই ট্যারিফ বাস্তবায়নে ট্রাম্প কতদূর যেতে পারেন এবং কেন আর্থিক বাজারগুলো এখন আগের মতো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না?
অধ্যাপক উলফার্সের মতে, “ট্রাম্প বিশ্বাস করেন ট্যারিফ একটি ভালো কৌশল। এমনকি আইনি জটিলতা থাকলেও তিনি এগিয়ে যেতে চাইবেন। আর তাঁর আইনজীবীরা তাঁকে বিকল্প পথ বাতলে দিচ্ছেন।”
এই ঘোষণার প্রভাবে শেয়ারবাজারে প্রাথমিক ধাক্কা লাগলেও সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়া কম লক্ষ্য করা গেছে। উলফার্স বলেন, “হয়তো বাজার বুঝে গেছে যে এটি একটি অদক্ষ প্রশাসন, যারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।”
দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প: নতুন রূপ
বিনিয়োগ ব্যাংক ব্যারেনজোয়ির প্রধান সুদের হারের কৌশল বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু লিলি বলেন, “বিশ্বনেতা ও বাজার এখন বুঝতে শুরু করেছে, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প আগের চেয়েও বেশি বেপরোয়া এবং অনিশ্চিত হয়ে উঠেছেন।”
তিনি বলেন, “আগে মনে করা হতো, ট্রাম্প এমন কিছু করবেন না যা বাজার ১০ শতাংশ বা তার বেশি পড়ে যাবে। কিন্তু এবার, তিনি জেনেও যে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তবুও ট্যারিফ আরোপ করেছেন।”
এই পরিস্থিতিতে স্পষ্ট—ট্যারিফ নিয়ে আইনি লড়াই কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রশাসনিক কাঠামো ও নীতির এক বড় পরীক্ষা। এবং সেই লড়াই এখনও শেষ হয়নি।