মেলবোর্ন, ১ জুন—হজের মৌসুমের মধ্যেই বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের জন্য ‘ব্লক ওয়ার্ক ভিসা কোটা’ সুবিধা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে সৌদি আরব। দেশটির মানব সম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
শনিবার আরব টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ছাড়াও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া দেশগুলো হলো পাকিস্তান, ভারত, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, নাইজেরিয়া, জর্ডান, আলজেরিয়া, সুদান, ইথিওপিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন এবং মরক্কো।
ব্লক ওয়ার্ক ভিসা হলো একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য সৌদি কোম্পানিগুলোর জন্য পূর্ব-অনুমোদিত কোটার ব্যবস্থা। এই কোটা অনুমোদিত হলে কোম্পানিগুলো নির্ধারিত প্রার্থীদের জন্য প্রবেশ ভিসার আবেদন করতে পারে।
এই সাময়িক নিষেধাজ্ঞার ফলে তালিকাভুক্ত দেশগুলো থেকে নতুন কর্মী নিয়োগের জন্য আর কোনো কোটা দেওয়া হবে না। আগেই অনুমোদিত কোটার প্রক্রিয়াতেও দেরি হতে পারে।
যেসব কর্মীর ভিসা আবেদন এখনও প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, সেগুলোর দেরি বা বাতিল হতে পারে। যাদের বৈধ কর্মসংস্থানের ভিসা রয়েছে তবে এখনও সৌদি আরবে প্রবেশ করেননি, তাদেরও প্রবেশে বাধা তৈরি হতে পারে।
নিষেধাজ্ঞার কারণ
এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো হজ মৌসুমে শ্রম বাজারে কর্মী প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা, বিদেশি কর্মীদের অবৈধভাবে হজ পালনে বাধা দেওয়া, অভিবাসন সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা। এই সিদ্ধান্ত অস্থায়ী হলেও বিদেশে কাজ খোঁজা কর্মী এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।
অতিরিক্ত ভিসার সীমাবদ্ধতা
সৌদি আরব একইসাথে তালিকাভুক্ত ১৪টি দেশের জন্য উমরাহ ভিসাও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত করেছে। পারিবারিক ভিজিট ভিসার ক্ষেত্রেও অনেক আবেদন ঝুলে আছে এবং অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়িক ভিসা পেতেও দেরি ও অস্বাভাবিক বাতিলের ঘটনা ঘটছে। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি এই দেশগুলোর জন্য ‘মাল্টিপল-এন্ট্রি’ ট্যুরিস্ট ভিসাও বন্ধ করা হয়েছে। শুধু ‘সিঙ্গেল-এন্ট্রি’ ভিসা দেওয়া হচ্ছে। যাদের ‘মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা’ রয়েছে, তাদের প্রবেশে সমস্যা হতে পারে।
ভ্রমণকারী ও নিয়োগদাতাদের জন্য নির্দেশনা
নিয়োগদাতাদের বিকল্প দেশ থেকে কর্মী নিয়োগের কথা ভাবতে বা কিছুদিন নিয়োগ পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।
ভ্রমণকারীদের সৌদি আরবে যাওয়ার আগে নিজেদের ভিসা এবং প্রবেশযোগ্যতা নির্ভরযোগ্য উৎস বা সৌদি দূতাবাসে যাচাই করতে হবে। নিয়োগ এজেন্সিগুলোকে ক্লায়েন্টদের সময়মতো তথ্য দিতে ও প্রক্রিয়ার সময় বাড়তে পারে সে বিষয়ে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে হজ ও উমরাহ করতে ইচ্ছুকদের সরকারি পোর্টাল নিয়মিত দেখে তথ্য নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা জুনের পরে উঠিয়ে নেওয়া হবে। তবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সরকারিভাবে দেওয়া হালনাগাদ তথ্য দেখে পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সৌদি আরবের আগের নিষেধাজ্ঞা
এর আগেও এপ্রিলে সৌদি আরব একই ১৪টি দেশের জন্য সাময়িক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এতে মূলত তাদের লক্ষ্য ছিল যেসব ব্যক্তি একাধিকবার প্রবেশের ভিসায় সৌদিতে গিয়ে অবৈধভাবে থেকে হজ করতে চায়, তাদের ঠেকানো। এই পদক্ষেপ ভিড় কমানো এবং হজ পালনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।