মেলবোর্ন, ০২ জুন— কানাডার মানিটোবায় ভয়াবহ দাবানলে এখন পর্যন্ত ১৭ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে সিবিএস জানিয়েছে, শনিবার পর্যন্ত প্রদেশটিতে অন্তত ২০টি দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে।
এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি ফ্লিন ফ্লন শহর। যেখান থেকে এরই মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শহরটির কাছে এখনই বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।
ফ্লিন ফ্লনে শনিবার সকাল পর্যন্ত কোনো ঘরবাড়ি আগুনে পুড়েনি। তবে দমকা হাওয়া যদি হয়- আগুন শহরের ভেতর ঢুকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর আগে গত বুধবারই মানিটোবায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। প্রদেশজুড়ে উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বমুখী দাবানলের কারণে ঝুঁকিতে থাকা একাধিক সম্প্রদায়কে সেদিন থেকেই সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এরই মধ্যে দাবানলের ধোঁয়া দক্ষিণমুখে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে কিছু অঞ্চলের বাতাসের মান বিপজ্জনক করে তুলেছে।
মানিটোবার প্রতিবেশী প্রদেশ সাসকাচুয়ান ও আলবার্টাতেও হাজার হাজার মানুষ দাবানলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
আলবার্টার এডমন্টনের উত্তর-পশ্চিমে সোয়ান হিলস শহর থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সাসকাচুয়ানের প্রিমিয়ার স্কট মো শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “চলমান গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া আগুন ছড়াতে সহায়তা করছে এবং নতুন নতুন এলাকাকে হুমকির মুখে ফেলছে।”
তিনি জানান, দাবানলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তবে এই সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজারে পৌঁছাতে পারে।
“পরবর্তী চার থেকে সাত দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যতক্ষণ না আমরা আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখি এবং পুরো উত্তরে ভারি বৃষ্টি না হয়”, বলেন মো।
শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কানাডা জুড়ে ১৮৮টি সক্রিয় দাবানল চলছে বলে জানিয়েছে কানাডিয়ান ইন্টারএজেন্সি ফরেস্ট ফায়ার সেন্টার। এর মধ্যে ১০০টি দাবানলকে নিয়ন্ত্রণহীন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এসব দাবানলের ধোঁয়ার প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রেও পড়ছে। ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস সতর্ক করে বলেছে, “কানাডিয়ান দাবানলের ধোঁয়া আকাশে ছড়িয়ে পড়ছে আপার মিডওয়েস্ট এবং গ্রেট লেকস অঞ্চলে। এটি বাতাসের মান খারাপ করে তুলছে, বিশেষ করে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য।”
কানাডার দাবানল মৌসুম মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে। ২০২৩ সালে দেশটি তার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল মৌসুম পার করেছে, যেটি পুরো উত্তর আমেরিকাজুড়ে মাসের পর মাস বিষাক্ত ধোঁয়ার আচ্ছাদন তৈরি করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দপ্তরের ফরেস্ট সার্ভিস শনিবার জানিয়েছে, তারা আলবার্টায় একটি বিমান পাঠিয়েছে এবং ১৫০ জন দমকলকর্মীসহ স্প্রিংকলার কিট, পাম্প ও পাইপসহ নানা সরঞ্জাম কানাডায় পাঠানো হচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী ব্রুক এল. রলিনস বলেন, “আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের বিপদের সময়ে পাশে আছি। আমাদের ফরেস্ট সার্ভিসের দাবানল মোকাবেলা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা বিশ্বের সেরা। যারা সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসছেন, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
এদিকে মানিটোবার উত্তরের ক্র্যানবেরি পোর্টেজ এলাকায় দাবানলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে শনিবার আনুমানিক ৬০০ বাসিন্দার জন্য বাধ্যতামূলক সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। আশেপাশের ছোট ছোট কমিউনিটিকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, প্রস্তুত থাকতে।
স্থানীয় কেলসি মিউনিসিপালিটির জরুরি পরিস্থিতির সমন্বয়কারী লরি ফরবস সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “পরিবার ও বন্ধুদের কাছে থাকার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিন- কারণ থাকার জায়গা খুবই সীমিত।”
প্রদেশজুড়ে বহু জায়গায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এমনকি দক্ষিণে মার্কিন সীমান্ত থেকে মাত্র ১২ মাইল দূরের উইঙ্কলার শহরেও আশ্রয় নিচ্ছে সাধারণ মানুষ।
সপ্তাহজুড়ে ক্রমশ বাড়তে থাকা আগুনের কারণে শনিবার বড় আকারে আদিবাসী গোষ্ঠী পিমিচিকামাক ক্রি ন্যাশনের মানুষদের সরিয়ে নেওয়া হয়। ওইদিন পাঁচটি ফ্লাইটে বাসিন্দাদের উইনিপেগে নেওয়ার কথা ছিল।
সামাজিক মাধ্যমে প্রধান ডেভিড মনিয়াস লেখেন, “আগুন মূল রাস্তা পেরিয়ে গেছে, চারপাশ ধোঁয়া আর ছাইয়ে ঢাকা।”
উইনিপেগ শহরে অন্যান্য দাবানল-আক্রান্ত মানুষ, পর্যটক ও ব্যবসায়ী সহ সবধরণের আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য জন্য নগর কর্তৃপক্ষ পাবলিক বিল্ডিং খুলে দিয়েছে।
মানিটোবায় আদিবাসী নেতারা, যাদের মধ্যে মনিয়াসও আছেন- শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য শহরের হোটেলগুলোতে আর জায়গা নেই। তারা সরকারের কাছে অনুরোধ জানান- অগ্রাধিকারভিত্তিতে এসব হোটেলে আশ্রয়প্রার্থীদের স্থান দিতে।
ম্যানিটোবা চিফস অ্যাসেম্বলির গ্র্যান্ড চিফ কাইরা উইলসন বলেন, “৯০ দশকের পর এটিই সবচেয়ে বড় আকারের স্থানান্তর। আমাদের শিশুরা মেঝেতে ঘুমাচ্ছে, মানুষ করিডোরে দাঁড়িয়ে, বাইরে অপেক্ষা করছে। এখন আমাদের একসাথে দাঁড়াতে হবে। মানুষ ক্লান্ত।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের নিজেদের মানুষের জন্য জায়গা নিশ্চিত করতে হবে।”
ফ্লিন ফ্লনের কাছে ও সাসকাচুয়ান ও ক্রেইটনে দাবানলটি শুরু হয় সোমবার। সেখান থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মানিটোবায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের।