মেলবোর্ন, ০২ জুন—ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়াম মজুদ করার অভিযোগের মধ্যেই দেশটিকে নতুন পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওমানের মধ্যস্থতায় দেওয়া এই প্রস্তাব নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি। তবে ইরান জানিয়েছে, তারা জাতীয় স্বার্থের আলোকে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে।
শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি বলেন, “চুক্তিটি গ্রহণ করাই ইরানের জন্য সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইরান কখনোই পরমাণু অস্ত্র পাবে না।”
ইরানের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, “ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আলবুসাইদির সঙ্গে বৈঠকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত পরমাণু চুক্তির কিছু ‘উপাদান’ পেয়েছেন।
“আমাদের জাতীয় স্বার্থ, অধিকার ও মৌলিক নীতির ভিত্তিতে পর্যালোচনা করে প্রস্তাবটির যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।”
এই প্রস্তাব এমন সময় এল, যখন জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সি(আইএইএ) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানায়, ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন আরও বাড়িয়েছে।
এটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে একটি বড় ধাপ, কারণ অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়ামকে ৯০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ করা লাগে।
আইএইএ’র হিসাবে, বর্তমানে ইরানের কাছে ৪০০ কেজির বেশি ৬০ শতাংশ মাত্রার ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে, যা প্রক্রিয়াজাত করলে আনুমানিক ১০টি পরমাণু বোমা তৈরির উপযুক্ত।
ইরান অবশ্য সব সময় বলে এসেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। তবে আইএইএ বলেছে, তারা ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের প্রকৃতি নিশ্চিত করতে পারছে না, কারণ তেহরান তাদের সিনিয়র পরিদর্শকদের তথ্য ও প্রবেশাধিকার দিচ্ছে না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন-জেসিপিওএ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেন এবং ইরানের ওপর আবারও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
ট্রাম্প ওই চুক্তিকে ‘দুর্বল ও অস্থায়ী’ বলে আখ্যা দেন। এরপর থেকেই ইরান ধীরে ধীরে চুক্তির সীমাবদ্ধতা লঙ্ঘন করতে শুরু করে।
সম্প্রতি ওমানের মধ্যস্থতায় নতুন একটি চুক্তির জন্য তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে এখনো বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়েছে, বিশেষ করে চুক্তির আওতায় ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত থাকবে কি না-এই প্রশ্নে।
আএইএ’র প্রতিবেদন বলছে, গত তিন মাসে ইরান গড়ে মাসে একটির মতো অস্ত্র তৈরির উপযুক্ত ইউরেনিয়াম উৎপাদন করেছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন, ইরান চাইলে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য উপযুক্ত ইউরেনিয়াম প্রস্তুত করতে পারে এবং কয়েক মাসের মধ্যে বোমাও বানাতে সক্ষম।
তেহরান অবশ্য বলে আসছে, তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে চায় না। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের প্রবেশাধিকার না দিয়ে তাদের সন্দেহ আরও গভীর করেছে।
এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি চাইছে আইএইএ’র পরিচালনা পর্ষদ ইরানকে চুক্তি লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করুক।