মেলবোর্ন ৮ জুন
আরেকটি বড় ম্যাচ এবং যথারীতি সেই প্রসঙ্গ এসে হাজির। কোনো নকআউট ম্যাচ বা সেমি-ফাইনাল কিংবা ফাইনাল ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা থাকা মানেই অবধারিত প্রশ্ন, ‘এবারও কি তারা চোক করবে?’ সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ মার্ক বাউচারের বিশ্বাস, এবার আর এমন হবে না। খেলোয়াড়ি জীবনে বেশ কয়েকবার এই অভিজ্ঞতার স্বাক্ষী কিংবদন্তি এই উইকেটকিপারের মতে, টেস্ট ক্রিকেট বলেই এবার ‘চোক’ করার শঙ্কা কম তাদের দলের।
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসরের ফাইনালে মাঠে নামার অপেক্ষায় দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে বুধবার শুরু ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ গত আসরের বিজয়ী অস্ট্রেলিয়া।
প্রথম আসরে দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল পঞ্চম স্থানে, গত আসর শেষ করে তারা তিনে থেকে। উন্নতির ধারায় প্রোটিয়ারা এবার পৌঁছে গেছে ফাইনালে।
এখানেই তাদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার চেয়েও বড় প্রতিপক্ষ ‘চোকার’ তকমা। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের মতো কোয়ার্টার-ফাইনাল বা সেমি-ফাইনালের মতো নকআউট ম্যাচ পেরিয়ে ফাইনালে আসার ব্যাপার এখানে ছিল না। তাই ‘চোকার’ তকমার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হয়নি। কিন্তু ফাইনালে তো সেই ভয় থাকছেই!
এই বাস্তবতাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বাউচার। তবে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকনিফোকে তিনি বললেন, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যেমন ম্যাচের কোনো একটি মুহূর্তে ‘চোক’ করলেই সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যেতে পারে, টেস্ট ক্রিকেটে সেই শঙ্কাটা কম।
যেহেতু ট্রফির লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছি আমরা, অনেকেই বলছেন যে আমরা পারব না (ফাইনালে চোক করব)। তবে আমার মনে হয়, টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাপারটি ভিন্ন। এটা খেলা হয় অনেক লম্বা সময় ধরে। এখানে ম্যাচের নানা সময়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলি নিজেদের করে নিতে হয়।
“হ্যাঁ, ওই তকমা (চোকার) আমাদের সঙ্গী হবেই এবং কোনো একটি ট্রফি না জেতা পর্যন্ত এটা থেকে আমরা মুক্তি পাব না। তবে যে তরুণটা উঠে আসছে এবং দলকে এই পর্যায়ে এনেছে, তাদের কি এই তকমা প্রাপ্য? মোটেও না। আগের বছরগুলোর বোঝা তারা একরকম বহন করছে, তাদের ওপর ব্যাপারটা যা খুব কঠিন। তবে এখন এই মুহূর্তে নিজেদের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই।
দক্ষিণ আফ্রিকা যে ফাইনাল খেলছে, এটা নিয়েও আছে প্রবল সমালোচনা। তাদেরকে যে ফাইনালের যোগ্যই মনে করেন না বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ ক্রিকেট অনুসারীদের অনেকে!
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই চক্রে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতেই হয়নি তাদেরকে। দেশের মাঠে যে তিনটি সিরিজ তারা খেলেছেন, তিনটিই ছিল উপমহাদেশের দল (ভারত-পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা)। দেশের বাইরে তাদের তিন সিরিজের মধ্যেই দুটি ছিল তলানির দিকের দল বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। মূলত কঠিন পরীক্ষা ছিল তাদের নিউ জিল্যান্ড সফরে।
অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল খেলছে ১৯টি টেস্ট ম্যাচ পেরিয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা সেখানে খেলেছে স্রেফ ১২টি।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই ধরন নিয়ে সমালোচনা আছে তাই বরাবরই। দক্ষিণ আফ্রিকার ফাইনালে খেলা নিয়েও তাই আছে প্রচুর প্রশ্ন।
তবে বাউচার সেসব প্রশ্নকে পাত্তা দিতে চান না। বরং তাদের দেশে টেস্ট ক্রিকেটে জাগরণের সুযোগ নিয়ে রোমাঞ্চিত ১৪৭ টেস্ট খেলে ৫৫৫ ডিসমিসাল করা কিপার।
“অনেক লোকেই দক্ষিণ আফ্রিকার সমালোচনা করেছেন, যা খুব ন্যায়সঙ্গত নয়। যে দল সামনে যাদেরকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে, তাদের সঙ্গেই তো খেলতে হবে। সূচি তো আমরা ঠিক করি না। আমাদের প্রতিপক্ষ যারা ছিল, তাদেরকে হারানো উচিত ছিল এবং আমরা তা করেছি। সেই পথ ধরেই ফাইনালে এসেছি।
“সুযোগটা যখন এসেছে, দেশে সবাই খুব রোমাঞ্চিত। অনেক সমর্থক লন্ডনে যাবেন খেলা দেখতে, প্রচুর র্যান্ড (দক্ষিণ আফ্রিকার মুদ্রা) খরচ করবেন, খেলা দেখবেন। ভালো একটি ম্যাচই হওয়ার কথা। যদি আমরা জিততে পারি, আমার মনে হয়, আমাদের দেশে টেস্ট ক্রিকেটের পালাবদলের সূচনা হবে এতে।