মেলবোর্ন, ০৯ জুন— চামড়ার দাম নিয়ে হতাশ খুচরা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তাদের ধারণা ছিল এ বছর চামড়ার ব্যবসা করে তারা লাভ করবেন। কিন্তু অনেকেই বলছেন সব খরচ বাদ দিয়ে ‘হাতে কিছু থাকবে না।’
রবিবার ঈদের দ্বিতীয় দিন পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তার আড়তগুলোয় আসা মৌসুমি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এরকমই বলেছেন।
কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম বড় জায়গা পোস্তা। রবিবার বিকালে গিয়ে দেখা যায় রিকশা, ভ্যান ও ট্রাকে করে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন মাদ্রাসার কর্মকর্তারা চামড়া নিয়ে এসেছেন। আড়তদাররা দরদাম করে চামড়া কিনছেন। এ ছাড়া পাইকারি ব্যবসায়ীরা সড়কের পাশে চেয়ার নিয়ে বসে চামড়া কিনছেন।
এ বছর বেশির ভাগ গরুর কাঁচা চামড়া ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ছোট চামড়ার দাম ৬০০ টাকা পর্যন্ত উঠছে।
গত বছরও গরুর কাঁচা চামড়ার এ রকম দাম ছিল। এ ছাড়া এবার ছাগলের চামড়া প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা, যা গতবারও একই রকম ছিল।
একাধিক আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, একেকটি গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় ব্যবসায়ীদের থেকে কিনছেন। মাঝারি আকারের গরু কোরবানি হয় বেশি তাই সেই চামড়া কিনছেন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।
পোস্তার রফিকুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী জানান, বিকাল পর্যন্ত দেড় শতাধিক চামড়া কিনেছেন তিনি। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা না বুঝে বেশি দামে চামড়া কিনে নিয়ে আসেন। তবে বাজার ভালো না থাকায় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় চামড়া কিনছেন তারা।
বাংলাদেশে সারা বছর যে সংখ্যক পশু জবাই হয়, তার মোটামুটি অর্ধেক হয় এই কোরবানির ঈদের সময়। যারা কোরবানি যারা দেন, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে।
পাইকাররা সেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজ করে বিক্রি করেন ট্যানারিতে। ট্যানারি কেমন দামে চামড়া কিনবে, তা প্রতিবছর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
চলতি বছরের কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের যে দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে; তাতে গরুর চামড়ার দাম গেলবারের চেয়ে পাঁচ টাকা বেড়েছে, ছাগলের চামড়ার দাম বেড়েছে ২ টাকা।
ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কিনবেন; গত বছর এই দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
আর ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫৫ টাকা ৬০ টাকা গতবছর যা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ছিল।
আড়তদারদের কাছ থেকে লবণযুক্ত চামড়া বর্গ ফুট হিসেবে কেনেন ট্যানাররা। আর আড়তদার ও ফড়িয়ারা চামড়া আকার দেখে।
সুমন অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী মো. শরীফ দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “প্রতিটি গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় কিনছি। একেকটি চামড়া প্রসেস করতে লবণ ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ পড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। বাজার মন্দা, সে জন্য গতবারের চেয়ে কিছুটা কমে কিনছি।”
চামড়া বিক্রি করতে আসা মতিন রহমান বলেন, “যে আকারের চামড়া বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছি, সেগুলোর দাম হওয়া উচিত অন্তত ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। কিন্তু একপ্রকার লোকসান করেই চামড়া বিক্রি করতে হলো। সারা দিনের ভ্যান ভাড়াসহ বিভিন্ন খরচ করে আমার কাছে আর কিছুই থাকল না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাইকার ব্যবসায়ী দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “আমরা মূলত মৌসুমী ব্যবসায়ী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের থেকে চামড়া সংগ্রহ করি। পরে সেটা প্রসেস করে ট্যানারিতে বিক্রি করি। তারা আমাদের দাম কম দেয় তাই বাধ্য হয়েই আমরা কম দামে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের থেকে চামড়া কিনি।”
ইকবাল হোসেন নামের একজন ব্যবসায়ী জানান, ঈদের দিন ও পরদিন চামড়ার দাম শুরুতে কিছুটা ভালো থাকলেও হঠাৎ করেই সিন্ডিকেটের কারণে দাম অর্ধেকে নেমে আসে। বাজারে কিছু প্রভাবশালী আড়তদার সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম নিয়ন্ত্রণ করেছে।
তিনি বলেন, “এছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে চামড়া সংগ্রহ করে আনতে পরিবহন খরচও অনেক বেড়েছে, যার ফলে লাভের পরিবর্তে লোকসান হয়েছে।”