মেলবোর্ন, ০৯ জুন— থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। রবিবার (৮ জুন) দিনগত রাত দেড়টার দিকে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকায় আসেন।
তাকে বহন করা ফ্লাইটটি (টিজি ৩৩৯) অবতরণের পর আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাত পৌনে তিনটার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন রাগিব সামাদ। তিনি জানান, আবদুল হামিদ সাধারণ যাত্রীর মতোই দেশে এসেছেন। কোনো প্রটোকল চাননি। রাত দেড়টার দিকে ব্যাংকক থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।
ফ্লাইট থেকে হুইলচেয়ারে করে আবদুল হামিদকে নামিয়ে আনা হয়। বিমানবন্দরে তাকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। তার মুখে মাস্ক ও পরনে ছিল শার্ট-লুঙ্গি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ ও শ্যালক ডা. নওশাদ খান।
গত ৮ মে দিনগত রাত ৩টার দিকে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে (টিজি ৩৪০) ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন আবদুল হামিদ। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একের পর এক ঘটনা ঘটে। আন্দোলনের মুখে ১০ মে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের পতন হলে দলটির অনেক নেতাকর্মী দেশ ছাড়লেও আবদুল হামিদ দেশে অবস্থান করছিলেন। ৯ মাস পর চিকিৎসার জন্য ব্যাংককের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন তিনি।
আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা থাকার তথ্য রয়েছে। গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় তার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের হয়। মামলাটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ওবায়দুল কাদেরের নাম রয়েছে।
আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগের সময় ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
এদিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে হত্যা বা হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় তদন্ত ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হবে না।
সোমবার (৯ জুন) যাত্রাবাড়ী থানা পরিদর্শন ও ঈদে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।

থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের রোববার (৮ জুন) দেশে ফেরার বিষয়টি সামনে রেখে সাংবাদিকরা তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে মামলা রয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের অনেক মামলার তদন্ত হয়নি। তদন্ত শেষে যিনি অপরাধী প্রমাণিত হবেন তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। নির্দোষ কেনো ব্যক্তি যাতে সাজা না পায়। তাই তদন্ত সাপেক্ষে দোষী সাব্যস্তদের আইনের আওতায় আনা হবে। আইনের বাইরে কেউ নয়।’
ফৌজদারি মামলার তদন্তে দোষ বা অপরাধ মোটামুটি প্রমাণিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, নির্দোষ একজন মানুষকে কেন সাজা দেব।