মেলবোর্ন ১১ জুন
খেলার ৯৩ মিনিটে ফাহিমের ফাউল থেকে যখন পেনাল্টি আসেনি তখন ডাগআউট থেকে শুরু করে গ্যালারির প্রতিটি কর্নারে ছড়িয়ে পড়ে ক্ষোভ। হতাশ দর্শকরা রীতিমতো বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। মাঠের দিকে ছুড়ে ফেলেন পানির বোতল। পুরো দৃশ্যটিই যেন রেফারির এক ভুল সিদ্ধান্তের চরম প্রতিচ্ছবি।
ম্যাচ শেষে এই সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমি ফাহিমের সেই মুহূর্তটা পরিষ্কারভাবে দেখিনি, তবে যা শুনেছি এবং পরে দেখে মনে হয়েছে এটা পরিষ্কার পেনাল্টি। তখন আমরা চরমভাবে আক্রমণ করছিলাম, আর এমন একটা সিদ্ধান্ত যদি আমাদের পক্ষে যেত, ফলাফল ২-২ হতে পারত।” রেফারির উদ্দেশে কিছুটা হতাশাও প্রকাশ করেন তিনি। বলেছেন, “কেন পেনাল্টি দেননি সেটা তো একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন।”
তবে কোচ মনে করিয়ে দেন, দর্শকদের ক্ষোভ রেফারির প্রতি, নিজেদের দলের প্রতি নয়। তার ভাষায়, “তারা আমাদের খেলোয়াড়দের নয়, রেফারির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিল। আপনারা যদি পুরো ম্যাচ দেখেন, তাহলে বোঝা যাবে, আমরা একটি ড্র অন্তত প্রাপ্য ছিলাম।”
বাংলাদেশ যে দুই গোল হজম করেছে, সেখানেও ভুল ছিল বলে স্বীকার করেন কোচ। গোলরক্ষক মিতুলের ভুল নিয়েও কথা বলেন তিনি। বলেছেন, “ফলটা কঠিন, তবে আমরা এমন কিছু আশা করিনি। শুরুটা ছিল খুবই ইতিবাচক। আমরা উপরে প্রেসিং করছিলাম, ম্যাচে গতি ছিল। কিন্তু কয়েকটি ভুল আমাদের দাম দিতে হয়েছে। প্রথম গোলটা রোধ করা যেত, দ্বিতীয়ার্ধে আবারও গোল খেলাম। কিন্তু তারপরও আমি মনে করি, ছেলেরা দ্বিতীয়ার্ধে যা খেলেছে, তাতে গর্ব করার মতো জায়গা আছে।”
ম্যাচের শেষের দিকে খেলোয়াড়দের ক্লান্তি চোখে পড়ার মতো ছিল, যা এড়িয়ে যাননি কোচ ক্যাবরেরা। তিনি বলেন, “আমাদের গতি কমে যাচ্ছিল, কারণ হয়তো আমরা সিঙ্গাপুরের চাপকে ঠিকভাবে সামলাতে পারিনি। ওরা একটি মানসম্পন্ন দল, তাদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাদের কিছু সময় লেগেছে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আমরা একেবারে অন্যরকম ছিলাম। প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেছিলাম, একটি গোলও শোধ দিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য যে আমরা আর একটি গোল করতে পারলাম না।”
শেষ মুহূর্তের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং হেরে যাওয়া; এই দুইয়ে মিশে আছে বাংলাদেশের হতাশার রং। মাঠে ঘাম ঝরানো ফুটবলাররা হয়তো নিজেদের পারফরম্যান্সে কিছুটা গর্ব করতে পারেন, কিন্তু স্কোরলাইনের সত্যকে অস্বীকার করা যায় না। দিনশেষে সবটাই রয়ে গেল আফসোসে মোড়ানো এক গল্প হয়ে।
মূলত এই বিতর্কিত পেনাল্টি না পাওয়ার ঘটনা ঘটে যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিট। ম্যাচ তখন টানটান উত্তেজনায় ঠাসা। এমন মুহূর্তেই বাম দিক দিয়ে দুর্দান্ত গতিতে বল নিয়ে সিঙ্গাপুরের ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। গোলের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে ফেলেছিলেন তিনি, ঠিক তখনই পেছন থেকে তাকে মারাত্মক ট্যাকলে বাধা দেন ইরফান নাজফিব। স্পষ্ট ফাউলের আবেদন করে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা; পুরো স্টেডিয়াম যেন থমকে গিয়েছিল সেই মুহূর্তে। কিন্তু মাঠের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিলিপিনো রেফারি ক্লিফফোর্ড দেপুয়েত যেন নির্বিকার। পেনাল্টির আবেদনকে তিনি কর্নারে পরিণত করে দেন একটি সিদ্ধান্ত যা এক নিমিষে এই তীব্র হতাশায় ফেলে দেয় বাংলাদেশকে