শতদল তালুকদার, সিডনি থেকে
মেলবোর্ন, ১২ জুন—সিডনিতে গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধার পরিবেশে পালিত হল বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ১৩৫তম তিরোধান উৎসব। গত ৭ জুন শনিবার দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয় বাবা লোকনাথের বাল্যভোগ অর্পণের মাধ্যমে। দুপুরে রাজভোগ নিবেদন এবং পূর্ণ যজ্ঞ সম্পন্ন করার পর বাবার চরণে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মধ্য দিয়ে মূল পূজার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
গত দশ বছর ধরে এই পুজার মূল আচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সিডনির প্রিয় মুখ, শ্রদ্ধেয় শ্রী পরমেশ ভট্টাচার্য। তিনি শুধু এই উৎসব নয়, সংগঠনের সাথেও দীর্ঘদিন ধরে নিবিড়ভাবে যুক্ত।

পুজা শেষে ভক্তদের মধ্যে ফল ও প্রসাদ বিতরণ করা হয় এবং আয়োজিত হয় মধ্যাহ্নভোজ। বিকেলে বাচ্চাদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় বাবা লোকনাথের আরতি এবং এর পরপরই স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে হয় ভক্তিমূলক সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা। প্রতিটি পর্যায়েই ছিল ভাবগম্ভীর পরিবেশ এবং সুশৃঙ্খল আয়োজন।

সংগঠনের অন্যতম মুখপাত্র সুজিত রায় জানান,
“২০০৫ সালে কয়েকজন ছাত্র, যারা সিডনিতে স্টুডেন্ট ভিসায় এসেছিলেন, তারা Rockdale-এ একটি ইউনিটে ঘরোয়া পরিসরে প্রথম পুজার আয়োজন করেন। পরে ২০০৭ সালে Kogarah-এর School of Arts হল ভাড়া নিয়ে সর্বসাধারণের জন্য এই পুজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেই থেকে শুধুমাত্র ভক্তদের সহযোগিতায় এ আয়োজন আজও চলছে।”
রহস্যময় শিবের অবতার বাবা লোকনাথ
বাবা লোকনাথের বিখ্যাত বাণী ‘রণে বনে জলে জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়িবে, আমাকে স্মরণ করিও, আমিই রক্ষা করিব।’
লোকনাথ ব্রহ্মচারী ১১৩৭ বঙ্গাব্দ বা ইংরেজি ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে তত্কালীন যশোহর জেলা আর বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত মহকুমার চৌরশী চাকলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম রামনারায়ণ ও মায়ের নাম কমলা দেবী। বাবা ছিলেন একজন অত্যন্ত ধার্মিক ব্রাহ্মণ। পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান ছিলেন তিনি। লোকনাথকে সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করানোর জন্য ১১ বছরে উপনয়ন দিয়ে পাশের গ্রামের ভগবান গাঙ্গুলীর হাতে তুলে দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গী হন বাল্যবন্ধু বেনীমাধব। উপনয়ন শেষে লোকনাথ, বেনীমাধব ও ভগবান গাঙ্গুলী পদযাত্রা শুরু করেন। বিভিন্ন গ্রাম-শহর, নদ-নদী, জঙ্গল অতিক্রম করে প্রথমে কালীঘাটে এসে যোগ সাধনা শুরু করেন। এইরূপে গুরুর আদেশে বিভিন্ন স্থানে যোগ সাধনা ও ব্রত করে শেষ পর্যন্ত লোকনাথ ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেন।
বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী ছিলেন একজন হিমালয়ান যোগী, যাঁর যোগসাধনার মূল ছিলেন স্বয়ং শিব। ভক্তদের বিশ্বাস—তিনি ছিলেন শিবেরই অবতার। তিনি বলতেন, “দরিদ্র ও দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমার পূজা।” তাই লোকনাথভক্তদের কাছে সেবাই পরম ধর্ম।
এই উদার আদর্শকে ধারণ করেই প্রতিবছর বিদেশের মাটিতে, কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকেও আয়োজিত হচ্ছে বাবা লোকনাথের তিরোধান উৎসব।

এই উৎসবের সঙ্গে জড়িত নিবেদিতপ্রাণ সদস্যরা হলেন: সুজিত রায়, আশীষ রায়, সুমন পাল, উত্তম পাল, বিজয় কুন্ডু, কিশোর দাশ, রূপম রায়, শুভগত রায়, সুমন ঘোষ, শুভ্র মজুমদার, শৈবাল রায়, সৈকত বসাক, আনন্দ বিজয় রক্ষিত, সুদেব কর্মকার, অপূর্ব দেবনাথ, মৃনাল দেওয়ানজি, বিনীতা ঘোষ, দেবী সাহা, নীলাদ্রি সাহা, সনেট সাহা ও সুবীর চক্রবর্তী।