মেলবোর্ন ১৩ জুন- বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI171-এর ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ভারতের আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই লন্ডনগামী বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিধ্বস্ত হয়। এ পর্যন্ত অন্তত ২৪১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ, যা গত এক দশকে সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?
বিমানবন্দর ছেড়ে বেরিয়ে যায় এআই ১৭১। তখনও বিমানের সঙ্গে এটিসির যোগাযোগ ছিল। বিমান তখন ৬২৫ ফুট উপরে। স্থানীয় সময় দুপুর ১:৩৮ মিনিটে উড্ডয়নের পরপরই পাইলট বিপদসঙ্কেত পাঠান এটিসি-কে। কয়েক সেকেন্ডে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিমান তখন ৬২৫ ফুট উপরে। এরপর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি আহমেদাবাদের একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, বিখ্যাত BJ মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ওপর ভেঙে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিমানটি আকাশে কয়েকশো ফুট উঁচুতে উঠে হঠাৎ ধসে পড়ে এবং প্রচণ্ড বিস্ফোরণের পর বিশাল অগ্নিগোলক সৃষ্টি হয়।
নিহত ও আহতের সংখ্যা
ফ্লাইটটিতে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন, যার মধ্যে ২২৯ জন যাত্রী এবং ১৩ জন ক্রু। এদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, সাতজন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডিয়ান ছিলেন। নিহতদের মধ্যে গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানির নামও রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজেপি নেতা সম্পত পাত্র। দুর্ঘটনাস্থলে আরও অন্তত ৫ জন মেডিকেল ছাত্র নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন।
অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী
ব্রিটিশ নাগরিক রমেশ বিশ্বেশকুমার অলৌকিকভাবে এই দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যান। তিনি জানান, “উড্ডয়নের ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই বিকট শব্দ হয়, তারপর হঠাৎ সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়। যখন জ্ঞান ফেরে, চারপাশে শুধু মৃতদেহ আর ধ্বংসস্তূপ। কেউ একজন আমাকে টেনে নিয়ে হাসপাতালে পাঠায়।”
সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে ওই যাত্রী বলেন, ‘‘সব কিছু এত তাড়াতাড়ি ঘটেছিল, বুঝতেই পারিনি। যখন জ্ঞান ফেরে, উঠে দেখি, চারদিকে ছড়িয়েছিটিয়ে পড়ে রয়েছে লাশ। ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। উঠে দাঁড়ানোর পরেই পালাতে শুরু করেছিলাম আমি। সেই সময় কেউ একজন আমাকে ধরে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে দেন। তার পর ওই অ্যাম্বুল্যান্সে করেই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’
কেন ভেঙে পড়ল বোয়িং ৭৮৭?
দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক ধারণা, ডাবল ইঞ্জিন ফেলিওর বা পাখির সাথে সংঘর্ষের ফলে জ্বালানী সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিমানটি উড্ডয়নের পর স্বাভাবিক উচ্চতায় উঠলেও দ্রুত নিচে নেমে আসে, এবং এতে বোঝা যায় যে এটি পর্যাপ্ত ‘লিফট’ তৈরি করতে পারেনি। কেউ কেউ ধারণা করছেন, বিমানটির উইং-ফ্ল্যাপ ও স্ল্যাট সঠিকভাবে কনফিগার না হওয়াতেও এটি হতে পারে।
বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার: প্রথমবার বিধ্বস্ত
এটা বোয়িং ৭৮৭ সিরিজের প্রথম বড় দুর্ঘটনা। এ ধরনের বিমান বিশ্বব্যাপী এক হাজারের বেশি বিতরণ হয়েছে এবং অত্যন্ত নিরাপদ বলে পরিচিত ছিল। এই ঘটনার পর বোয়িং কোম্পানির শেয়ার মার্কিন সময় বৃহস্পতিবার চার শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
তদন্ত চলছে
ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড একটি তদন্তকারী দল পাঠাচ্ছে। ব্রিটেনও ভারতের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে এবং পররাষ্ট্র দপ্তর একটি COBRA জরুরি বৈঠক ডেকেছে।
তদন্তকারীরা বিমানের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করে তথ্য বিশ্লেষণ করছেন। তবে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহগুলোর অধিকাংশ এমনভাবে পুড়ে গেছে যে শনাক্ত করতে ডিএনএ টেস্ট লাগবে।
এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে বিমান নিরাপত্তা ও বোয়িং-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। meanwhile, পুরো ভারতবাসী ও প্রবাসী ভারতীয়রা এই দুর্ঘটনায় শোকাহত।