লেখক: শামীম আহমেদ, টরন্টো, অন্টারিও, ১৪ জুন, ২০২৫
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে সেনা অভ্যুত্থানে হত্যার পর বাংলাদশের কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের উপর সবচেয়ে বড়, পরিকল্পিত ও সমন্বিত হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট। ওই হামলায় মূল টার্গেট শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন এবং ৩০০ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণ আহত হন।
১০ অক্টোবর ২০১৮ সালে বেলা ১২ টায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এই হত্যা মামলার রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের যাবজ্জীবন সাজা হয়। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিমের মৃত্যুদন্ড হয় এই রায়ে। মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন হয় আরও অনেক আসামীর। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ এ অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ৬ জানুয়ারি ২০০৯-এ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মত শপথ নেন শেখ হাসিনা। এবং ধাপাচাপা পড়া এই মামলার পুনর্তদন্ত শুরু হয়।
বঙ্গবন্ধু এবং জিয়া হত্যাকান্ড যেখানে সেনাবাহিনীর আভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নেতৃত্বে হয়, সেখানে ২১ অগাস্ট হত্যা চেষ্টায় সামরিক, বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যুক্ত হয় ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠী, ও রাজনৈতিক দলসমূহ। উদ্দেশ্য ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করার অপরাধে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের হত্যা চেষ্টায় অভিযুক্ত ও দন্ডপ্রাপ্ত আসামী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সাথে লন্ডনে সরকারী খরচে দেখা করে ইউনুস প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আদালতের নিরপেক্ষতায় তার ও তার অবৈধ শক্তির ন্যূনতম শ্রদ্ধা নেই। এর আগে ইউনুসের দখলদার শক্তি আদালতের সকল বিচারকদের অবৈধভাবে অপসারণ করে তারেক রহমান ও ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার সকল আসামীকে কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মুক্তি দিয়ে এটি নিশ্চিত করে যে তাদের একমাত্র এজেন্ডা বাংলাদেশকে ৭১ পূর্ববর্তী মৌলবাদী শাসনব্যবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া।
কোটাবিরোধী আন্দোলনের ছদ্মাবরণে এসে জঙ্গীদের কোটা নিশ্চিত করা, বৈষম্য দূরীকরণের প্রস্তাব দিয়ে স্বাধীনতার স্বপক্ষের কন্ঠরোধ করা, অর্থনৈতিক স্বাধীকারের কথা বলে অর্থনীতিকে পঙ্গু করা, সুশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৩ হাজারেরও বেশী রাজনৈতিক সমর্থক ও পুলিশ হত্যা, দুর্নীতি নির্মূলের কথা বলে মাত্র ৯ মাসে ৫৪ বছরের চাইতে বেশী সামষ্টিক দূর্নীতি করা, বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশী বিনিয়োগ শূন্যতে নামিয়ে আনার ধারাবাহিকতায় ইউনুস তার মিথ্যাচারের আরেকটি নজির রাখল দন্ডপ্রাপ্ত আসামী, একটি রাজনৈতিক দলের পলাতক নেতার সাথে রাষ্ট্রীয় খরচে বিদেশে দেখা করে।
এটি প্রমাণ করেছে, ইউনুসের নেতৃত্বে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশে হবে না। ইউনুস মূলত এখন তার exit out খুঁজছে। সে প্রথমে চাইবে এনসিপি ও জামায়েত ইসলামী নামের সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য ও অসমর্থিত দুটি রাজনৈতিক দলের সাথে আপোষে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া নিশ্চিত করতে, যাতে জঙ্গী রাষ্ট্র বানানোর প্রক্রিয়া দেশে অব্যাহত থাকে। সেটি সম্ভব না হলে তারেক রহমানকে ক্ষমতা গছিয়ে নিরাপদে লুটকৃত অর্থসম্পদ নিয়ে দেশ ছাড়ার প্রতিশ্রুতি চাইবে ইউনুস ও তার অবৈধ শক্তি।
ইউনুস জানে না, তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না। তারেক রহমানের পিতা জিয়াউর রহমান তার রাষ্ট্রপ্রধানের হত্যাকান্ডে পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছে, ব্যক্তিস্বার্থ আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় ১১৩৪ জন মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তাকে ফাঁসি দিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও এত বড় হত্যাকান্ড আর হয়নি যেটা জিয়াউর রহমান করেছিল। তার সন্তান তারেক রহমানকে বিশ্বাস করেছে ইউনুস। ভেবেছে এতে তার নিজের স্বার্থ উদ্ধার হবে।
ইউনুস জানে না, এই তারেকের হাতে তার পতন হবে; সাথে সাথে পতন হবে গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের। কেবল সময়ের অপেক্ষা।
উল্লিখিত মতামত লেখকের নিজস্ব, এবং প্রতিষ্ঠানের অবস্থান বা দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে না।