মেলবোর্ন, ১৬ জুন— চলমান সংঘাতের অংশ হিসেবে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ইসরায়েল। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই পরিকল্পনায় সায় দেননি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা। রবিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “ইরানিরা এখনো পর্যন্ত একজন আমেরিকান নাগরিককেও হত্যা করেনি। তারা যদি এমন কিছু না করে, তবে আমরা তাদের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাকে হত্যার আলোচনাও করতে চাই না।”
ইসরায়েলের প্রস্তাব, ট্রাম্পের অনীহা
কর্মকর্তারা জানান, ইরানে বিমান হামলা শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রয়েছে। একপর্যায়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রকে জানান, তাদের হাতে খামেনিকে হত্যার ‘সুবর্ণ সুযোগ’ এসেছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রাম্প সরাসরি সেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন কি না তা নিশ্চিত নয়, তবে তিনি বিষয়টি সমর্থন করেননি।
তবে ট্রাম্প এখনো ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
নেতানিয়াহুর প্রতিক্রিয়া
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুকে প্রশ্ন করা হয় খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা সংক্রান্ত রয়টার্সের প্রতিবেদনের বিষয়ে। উত্তরে তিনি বলেন,
“এই বিষয়ে অনেক মিথ্যা তথ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি এ নিয়ে কোনো আলোচনায় যেতে চাই না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি শুধু এটুকু বলতে পারি—আমরা যা করা দরকার, তাই করি এবং করে যাব। যুক্তরাষ্ট্রও জানে, তাদের জন্য কী সঠিক।”
পরমাণু আলোচনা ঝুলে গেছে, কিন্তু আশাবাদী ট্রাম্প
যদিও পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, তবুও ট্রাম্প এখনো আশা করছেন যে ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু আলোচনা আবার শুরু হবে। আজ রোববার মাসকাটে ষষ্ঠ দফার বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও চলমান সংঘাতের কারণে তা বাতিল করা হয়েছে।
তীব্র প্রতিক্রিয়া খামেনির
ইসরায়েলি হামলার প্রথম দিনেই আয়াতুল্লাহ খামেনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন,
“এই ভয়াবহ অপরাধের মাধ্যমে জায়নবাদী শাসকরা নিজেদের জন্য একটি তিক্ত ও বেদনাদায়ক পরিণতি নিশ্চিত করেছে। এবং তারা সেই পরিণাম পাবেই।”
শুক্রবার ইসরায়েল যখন তেহরানসহ একাধিক সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়, তখনই পাল্টা জবাব দেয় ইরান। টানা তিন দিন ধরে চলছে হামলা ও পাল্টা হামলা।
রয়টার্সকে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “আমরা সবকিছুই জানতাম—ইসরায়েলি হামলার আগে-পরে।”
বিশ্লেষণ: উত্তেজনার নতুন মাত্রা
খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নে মার্কিন দ্বিধার খবর প্রকাশ্যে আসায় এই সংঘাত এখন নতুন একটি কূটনৈতিক ও নৈতিক মোড় নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েল যদি খামেনির বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নিত, তাহলে সেটি একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম হতো—যার ফলে যুদ্ধ গোটা অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হতো।