মেলবোর্ন, ১৬ জুন— ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিজ বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় প্রচণ্ড হতবাক হয়ে পড়েছেন ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের বাসিন্দা জুলিয়া জিলবারগলৎজ। রোববার ভোরের দিকের এই হামলার ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জুলিয়া বলেছেন, তিনি এর আগে কখনই এই ধরনের হামলার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হননি।
ইসরায়েলের বাণিজ্যিক নগরী তেল আবিবের কাছাকাছি উপকূলীয় শহর বাত ইয়ামের নিজের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে বের হওয়ার সময় এএফপির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন জুলিয়া। এ সময় তিনি বলেন, ‘‘আমি আতঙ্কিত এবং স্তম্ভিত। আমি জীবনে অনেক কঠিন সময় পার করেছি, কিন্তু কখনই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমি বাড়িতে ছিলাম, ঘুমাচ্ছিলাম। ক্ষেপণাস্ত্র ধেয়ে আসার বিষয়ে সাইরেনের সতর্কতার সঙ্কেত আমি শুনতে পাইনি।’’
এর পরপরই প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় জুলিয়ার। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরানের ওই হামলায় দুই শিশুসহ অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন; যাদের মধ্যে জুলিয়ার বাড়ির বাসিন্দারাও ছিলেন।
একই শহরের আরেক বাসিন্দা ইয়েভগেনিয়া দুদকা। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয়েছে তার বাড়িঘরও। তিনি বলেন, ‘‘সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। কোনও ঘর নেই। এটা সত্য।’’
ওই রাতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া হামলা-পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
রোববার ভোররাতে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র যেসব স্থানে আঘাত হানে, সেসব এলাকার ধ্বংসচিত্র ইসরায়েলি টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তেল আবিব ও এর পাশের রিশন লেজিওনে শহরেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তার আগে ইসরায়েল বাহিনীর যুদ্ধবিমান ইরানের সামরিক, পারমাণবিক এবং আবাসিক এলাকায় হামলা চালায়।
অলৌকিকভাবে বেঁচে আছি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র দেশের ২২টি স্থানে আঘাত হেনেছে। ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপে সমর্থন জানিয়ে এএফপিকে এক নারী বলেছেন, ‘‘আমি জানি ইরান ইসরায়েলের জন্য খুব বিপজ্জনক এবং তারা আমাদের ধ্বংস করতে চায়।’’
তিনি বলেন, ‘‘তবে আমি এটা নিয়েও অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকার হয়তো অপ্রয়োজনে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।’’ বাত ইয়ামের মেয়র জেভিকা ব্রত ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ‘‘ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে এবং এতে ডজনখানেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’

তিনি বলেন, প্রাণহানির পাশাপাশি শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন এবং অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন। মেয়র জেভিকা বলেন, ‘‘হোম ফ্রন্ট কমান্ডের উদ্ধারকর্মীরা কয়েক ঘণ্টা ধরে কাজ করছেন এবং আটকে পড়া শেষ ব্যক্তিকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত তারা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করবেন।’’
বাত ইয়াম শহরের আরেক বাসিন্দা শাহার বেন সিয়ন। নিজের বাড়ির ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করছিলেন তিনি। শাহার বেন বললেন, ‘‘আমরা বেঁচে গেছি—এটা অলৌকিক এক ঘটনা।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমি বেজমেন্টে যেতে চাইনি। মা জোর করে পাঠিয়েছেন…। তারপর প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হলো। তখন মনে হয়েছিল পুরো বাড়িটাই বুঝি ধসে পড়েছে। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় বেঁচে গেছি। এটাই অলৌকিক।’’