মেলবোর্ন, ১৬ জুন— ওয়েস্টার্ন সিডনির ব্যস্ত রাস্তায় দিনের আলোয় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অপরাধ জগতের এক সন্দেহভাজন সদস্যসহ তিনজন। এই ঘটনায় কেউ নিহত না হলেও এ ঘটনায় পুরো শহরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে অবার্ন রোডে অবস্থিত এম ব্রাদার্স ক্যাফের সামনে, দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে। মুখোশধারী বন্দুকধারীরা গুলি চালায় সামিমজান আজারি (Samimjan Azari), তার এক বন্ধু এবং এক ৫০ বছর বয়সী নারীর ওপর। এই নারী ওই দোকানে কাজ করছিলেন এবং অপর দুই ব্যক্তির সঙ্গে তার কোনও পূর্ব পরিচয় ছিল না।
আজারির হাতে ও কাঁধে গুলি লাগে, তার বন্ধুকে মুখে গুলি করা হয়। দোকানে কাজ করা ওই নারীকে গুলি করা হয় বুকে দু’বার। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের অ্যাক্টিং কমিশনার পিটার থার্টেল (Peter Thurtell) নিশ্চিত করেছেন, ওই নারী শুধুমাত্র নিজের কাজ করছিলেন।

পুলিশ জানায়, এই গুলি চালনার এক ঘণ্টা আগেই আজারি জামিন শর্ত অনুযায়ী অবার্ন পুলিশ স্টেশনে হাজিরা দেন, যা ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৭৫০ মিটার দূরে। নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশ মন্ত্রী ইয়াসমিন ক্যাটলি বলেন, “এই নারী একজন নিরীহ নাগরিক, তিনি শুধুমাত্র নিজের কাজ করছিলেন। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য যে সাধারণ মানুষ এমন সহিংসতায় শিকার হয়েছে।”
কমিশনার জানান, মুখোশধারী দুই ব্যক্তি দোকানে ঢুকে মোট আটটি গুলি চালায় এবং দোকানের পেছনের অফিসে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে একটি কালো বিএমডব্লিউ গাড়িতে পালিয়ে যায়, যার নম্বর প্লেট নকল ছিল।
তিনজন গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে ঘটনাস্থলেই জরুরি চিকিৎসা দিয়ে ওয়েস্টমিড হাসপাতালে পাঠানো হয়। আজারি ও ওই নারী এখন স্থিতিশীল থাকলেও অপর আরেক ব্যক্তি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিনস এবং পুলিশ মন্ত্রী ক্যাটলি দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানান এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির আশ্বাস দেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা পরপর কয়েকটি উচ্চ শব্দের গুলির আওয়াজ শুনেছেন এবং কয়েকজন মুখোশধারী ব্যক্তিকে দৌড়াতে দেখেছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আশিম শ্রেষ্ঠা বলেন, “আমি পাঁচটা গুলির শব্দ শুনি, পাঁচ সেকেন্ড পর আরও দুইবার গুলি হয়।”
আজারির বিরুদ্ধে এটাই প্রথম গুলির চেষ্টা নয়। গত ২৫ মে গ্র্যানভিলে সংঘটিত হামলায় তার দেহরক্ষী দাউদ জাকারিয়া নিহত হন এবং আইনজীবী সিলভান সিং আহত হন। পুলিশ মনে করছে আজারি ওই হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিলেন। তাকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আদালতে জানানো হয়, উডভিল রোডে গুলির ঘটনাটি চলতি বছরে আজারির জীবনের ওপর দ্বিতীয় হামলা। এর আগে ব্রাইটন লে স্যান্ডসে তিন মাস আগে সে গুলির হাত থেকে অক্ষত অবস্থায় পালাতে সক্ষম হয়েছিল।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, “আজারি গ্যাং যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। রাস্তাঘাট নিরাপদ থাকবে না যতক্ষণ না তাকে আটক করা হয়।”তবে আদালত তাকে জামিন দেয় এবং ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, তিনি মনে করেন না যে আজারি পালিয়ে যাবেন এবং তার বিরুদ্ধে অস্ত্র রাখার মামলা দুর্বল।
ঘটনাটি তদন্ত করছে স্টেট ক্রাইম কমান্ডের নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্স ফ্যালকন।