মেলবোর্ন, ১৬ জুন—ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কায়, শত শত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক দেশ দু’টি থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন। আলবানিজ সরকার জানিয়েছে, তারা সংকটে থাকা নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় “হামলা” চালানোর পর উভয় দেশই তাদের আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে। এর জেরে অস্ট্রেলিয়া মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত তার সব দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে, জারি করেছে ‘ভ্রমণ না করার’ সতর্কতা এবং চালু করেছে জরুরি সহায়তা পোর্টাল।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী পেনি ওয়াং জানান, জাতীয় সংকট কেন্দ্র থেকে সম্ভাব্য বিমানযোগে উদ্ধারসহ একাধিক বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে কাজ চলছে। “আকাশপথ যখন খোলা হবে এবং পরিস্থিতি যখন নিরাপদ হবে, তখন আমরা সহায়তাপূর্ণ প্রস্থান পরিকল্পনা কার্যকর করব,” তিনি বলেন।
তিনি আরও জানান, ইসরায়েলে ৩০০ জন এবং ইরানে ৩৫০ জন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক সহায়তা চেয়ে নিবন্ধন করেছেন। “টেল আভিভ এবং তেহরানে এখনো সকাল, তাই নিবন্ধনের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করছি,” তিনি জানান।
এর আগে, সহকারী প্রধানমন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস বলেন, “উভয় দেশে হাজার হাজার অস্ট্রেলিয়ান রয়েছেন, যার মধ্যে কূটনৈতিক কর্মী ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও আছেন।”

তিনি আশ্বস্ত করেন, তেহরান ও টেল আভিভে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাস ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সব সদস্য সুরক্ষিত এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
এই মুহূর্তে আকাশপথ বন্ধ, তাই আমাদের পরামর্শ হচ্ছে—নাগরিকরা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন, স্মার্টট্রাভেলার ওয়েবসাইট নজরে রাখুন এবং প্রয়োজনে জরুরি কনস্যুলার নম্বরে যোগাযোগ করুন।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল বা ইরানে প্রবেশ না করতে নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
মারাত্মক উত্তেজনা ও ‘অনিবার্য প্রভাব’
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় ইরানের তেল ও গ্যাস স্থাপনায় ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে এবং তেহরানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সামরিক স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে, ইরান ইসরায়েলের হাইফা বন্দর শহর ও দক্ষিণাঞ্চলের আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়েছে এবং হামলা আরও জোরদার করার হুমকি দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার সহকারী প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই সংঘাত নিয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং শান্তিপূর্ণ কূটনীতি ও সংলাপের আহ্বান জানাচ্ছি।” যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ থেকেও একই আহ্বান এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জ্বালানির দামে প্রভাব
এই উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে, ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম রোববার রাতেই ৪ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল $৭৭ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। শুক্রবার সংঘাত শুরুর পরই এর দাম ৮ শতাংশ বেড়েছিল।
মার্লেস বলেন, “জ্বালানির দামে বাড়তি চাপ পড়বে—এটা অনিবার্য। কিন্তু কতটা প্রভাব পড়বে তা নির্ভর করছে সংঘাত কতদিন চলবে তার ওপর।”
তিনি যোগ করেন, “ইউক্রেন যুদ্ধেও আমরা দেখেছি কিভাবে যুদ্ধ বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় এবং অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে।”
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ও নিরাপত্তা উদ্বেগ
প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, যিনি বর্তমানে কানাডায় G7 সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন, জানান অস্ট্রেলিয়ার জ্বালানি মজুদের বিষয়ে সরকার নজর রাখছে। তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছি।”
তিনি আরও জানান, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনির সঙ্গে আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিও স্থান পেয়েছে। উভয় নেতা সংঘাত নিরসনে সংলাপ ও কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
তিনি বলেন, “ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে এগোচ্ছে—এটি গোটা অঞ্চলের জন্য হুমকি। তবে, আমরা অন্য দেশের মতোই কূটনীতি ও শান্তিপূর্ণ সমাধানকে গুরুত্ব দিচ্ছি।”
ইসরায়েল তাদের সামরিক অভিযান শুরু করে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রতিবেদনের পর, যেখানে বলা হয়—ইরান তার পরমাণু চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে এবং তাদের কর্মসূচি শুধুই শান্তিপূর্ণ কি না, তা নিশ্চিত নয়।
সোমবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, ১৪ জন ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড বাহিনীর গোয়েন্দা প্রধান ও তার সহকারীও নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ও নীতিগত রুদ্ধদ্বার পরিকল্পনা
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ইসরায়েল আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু ট্রাম্প তা প্রত্যাখ্যান করেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রায় সরাসরি ইরানে ‘শাসন পরিবর্তনের’ আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী খামেনির বিরুদ্ধে হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি।