হেনরি জুয়ার্টজের প্রতিবেদন | অনুবাদ: OTN বাংলা ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্য বর্তমানে এক পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় যুদ্ধের কিনারায় দাঁড়িয়ে—যা বিশ্ব নেতারা বহুদিন ধরেই ভয় পাচ্ছেন, বিশেষ করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকে। আর এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলা ইরানের সামরিক শক্তিকে বড় ধাক্কা দিয়েছে।
ইরান নেতৃত্ব হত্যার নিশানায়
ইসরায়েল এমনভাবে আঘাত করেছে যে, ইরানের শীর্ষ সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা একের পর এক নিহত হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ইরানের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সেনা, নিরাপত্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা হামলার শিকার হয়েছেন। এই তালিকায় উল্লেখযোগ্যভাবে পাঁচজন সিনিয়র নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট আছেন, যাঁরা শাহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। তাঁরা ১২ ও ১৩ জুন নিহত হন।
অপারেশন রাইজিং লায়ন: যুদ্ধের ঘোষণা
১২ জুন, রাত ১২টার পরপরই ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এক বিশাল বিমান অভিযান শুরু করে। এর উদ্দেশ্য ছিল—ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সম্ভাব্য ক্ষমতা “ধ্বংস ও নির্মূল করা” এবং দেশটির শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা নষ্ট করা।
এই হামলা আসে মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর, যখন জাতিসংঘ ইরানের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান পরমাণু সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা লঙ্ঘন করছে এবং ২০১৯ সাল থেকে দেশটি আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের সঙ্গে পুরোপুরি সহযোগিতা করছে না।
চোরাগোপ্তা ড্রোন হামলা ও যুদ্ধবিমানের বোমাবর্ষণ
হামলার সূচনালগ্নে ইসরায়েল অভ্যন্তরীণভাবে অবস্থানরত ছোট ছোট ড্রোন দিয়ে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার অকার্যকর করে দেয়। এরপরই শুরু হয় প্রকৃত বোমাবর্ষণ—২০০টিরও বেশি আইডিএফ যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে F-35 স্টিলথ ফাইটারও রয়েছে, একযোগে ১০০টিরও বেশি সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়।
এই বিমান হামলা মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে ইরাক যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় আক্রমণ বলে মনে করা হচ্ছে। হামলার সময় ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তারা অনেকেই রাজধানী তেহরানের উপশহরে নিজেদের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, যা আরও ভোগান্তির সৃষ্টি করে।
সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা ও বিশ্ব প্রতিক্রিয়া
আমেরিকার একাধিক সূত্র জানায়, ইসরায়েল ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল। তবে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই পরিকল্পনায় ভেটো দেন।
এর জবাবে ইরানও ব্যাপক আকারে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও কিছু কিছু হামলা সফলভাবে আঘাত হেনেছে।
এখন প্রশ্ন: কতদূর যাবে এই সংঘাত?
বিশ্বের শীর্ষ নেতারা শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—এত বড় আকারের পাল্টাপাল্টি হামলার পর ইসরায়েল ও ইরান আর কতদূর যেতে প্রস্তুত? যুদ্ধ কি কেবল শুরু, নাকি এটি একটি বৃহত্তর ধ্বংসের পূর্বাভাস?