ডেস্ক রিপোর্ট-
মেলবোর্ন, ১৮ জুন—ইসরায়েল যদি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তা চায়, তবে ফোর্ডো পারমাণবিক জ্বালানি সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্র ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বাংকার বাস্টার’ ধরনের বিশেষ শক্তিশালী বোমা সরবরাহ করতে হতে পারে।
এই ধরনের বোমা যুক্তরাষ্ট্রের বিমান থেকেই ফেলা সম্ভব, যার ফলে কূটনৈতিক ও সামরিকভাবে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের হামলা ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য পরমাণু আলোচনার পথ বন্ধ করে দিতে পারে।
কী এই বাংকার বাস্টার বোমা?
‘বাংকার বাস্টার’ হলো এমন একটি বোমা যা মাটির গভীরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটায়। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভাণ্ডারে থাকা GBU-57A/B Massive Ordnance Penetrator বোমাটি প্রায় ১৩,৬০০ কেজি ওজনের এবং এটি ৬০ মিটার গভীরে প্রবেশ করতে সক্ষম।
এই বোমাগুলো একের পর এক ফেলা হলে এটি আরও গভীরে ‘ড্রিল’ করার মতো কাজ করতে পারে। মার্কিন বিমানবাহিনী জানিয়েছে, এই বোমা এখন কেবল B-2 Spirit stealth bomber থেকে নিক্ষেপ করা সম্ভব, কারণ একমাত্র এই বিমানেই এটি বহনের জন্য প্রোগ্রাম করা হয়েছে।

কেন ফোর্ডো টার্গেট?
ফোর্ডো ইরানের দ্বিতীয় পারমাণবিক কেন্দ্র, যা কোম শহরের কাছে একটি পর্বতের ভিতরে নির্মিত। এটি প্রায় ৮০ মিটার গভীরে এবং রাশিয়ান ও ইরানি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সুরক্ষায় রয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলি অভিযানে ওই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি এবং ফোর্ডো এই কর্মসূচির অংশ।
ইসরায়েলি সক্ষমতা ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালাইসিস অস্ট্রেলিয়ার পরিচালক মাইকেল শু-ব্রিজ বলছেন, ইসরায়েলের কাছে গভীর বাংকার ধ্বংসের উপযোগী অস্ত্র নেই। তাদের সর্বোচ্চ ২,২৭০ কেজির বোমা থাকলেও, ফোর্ডো ধ্বংসে ১৩,৬০০ কেজি বোমা প্রয়োজন হবে।
ইসরায়েলের মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইহিয়েল লাইটার ফক্স নিউজকে বলেন, “এই পুরো অভিযান তখনই সম্পূর্ণ হবে যখন ফোর্ডো ধ্বংস হবে।”
ইরানের প্রতিক্রিয়া ও পারমাণবিক উদ্বেগ
ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম ঘারিবাবাদি বলেছেন, ইরান তার পারমাণবিক সরঞ্জাম ও উপকরণ সংরক্ষায় এমন ব্যবস্থা নেবে যা আর আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (IAEA) কে জানানো হবে না। ফলে ভবিষ্যতে গোপনে সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালানো হতে পারে বলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
IAEA জানিয়েছে, ফোর্ডোতে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে ইসরায়েলি হামলার আগ পর্যন্ত ইরান যে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে—এমন শক্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কি?
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক রডার শানাহান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত আক্রমণে সরাসরি অংশ নেয়নি, তবে তারা তাদের সামরিক সরঞ্জাম মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করে প্রেসার তৈরি করছে।
এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, “আমরা এখন ইরানের আকাশ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। আমরা কোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চাই না। আমাদের ধৈর্যের সীমা ফুরিয়ে আসছে।”
এদিকে, ইরানের সংসদ সদস্যরা এমন একটি প্রস্তাব তৈরি করছেন যা অনুযায়ী ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT) থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।
ফোর্ডোর মতো গভীর পাহাড়ের নিচে থাকা স্থাপনায় আঘাত হানতে যুক্তরাষ্ট্রের GBU-57A/B বাংকার বাস্টার বোমা কার্যকর হতে পারে। এই ধরণের হামলা মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের সংঘাতের ইঙ্গিত বহন করছে এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিক সম্পর্কের জন্য এটি হতে পারে এক জটিল ও স্পর্শকাতর মোড়।
সূত্র: ABC / আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা