মেলবোর্ন, ১৪ মে— সৌদি আরব সফরে গিয়ে বড় ঘোষণা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, সিরিয়ার ওপর আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবেন।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রিয়াদের বিনিয়োগ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু এখন সিরিয়ার এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। আমি সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করার নির্দেশ দেব, যাতে তারা বড় হওয়ার একটি সুযোগ পায়।”
তিনি বলেন, “এটা তাদের উজ্জ্বল হওয়ার সময়। আমরা সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছি। শুভকামনা সিরিয়া, আমাদের কিছু বিশেষ কিছু দেখাও।”
রিয়াদের বিনিয়োগ সম্মেলনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প হাসতে হাসতে বলেন, “আহা, আমি যুবরাজের জন্য কী না করি।”
তিনি বলেন, “নিষেধাজ্ঞাগুলো ছিল কঠোর এবং পঙ্গু করে দেওয়ার মতো। তখন সেগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ, সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তবে এখন তাদের উজ্জ্বল হওয়ার সময়। এখন তাদের উজ্জ্বল হওয়ার সময়।”
সিরিয়ার অর্থনীতি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি দেশটিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ২০২৪ সালের বসন্তে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ার সরকারি পরিসংখ্যান বলছে ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতি অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে।
২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংক সিরিয়াকে নিম্ন-আয়ের দেশ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মতে, সিরিয়ার দুই কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সিরিয়ার অর্থনীতির আকার ছিল ২৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার।
মঙ্গলবার ট্রাম্প সৌদি আরবে পৌঁছান। সৌদি আরবের যুবরাজ ও কার্যত শাসক মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। পরে বিমানবন্দরের রয়েল টার্মিনালেই তারা আলাপচারিতায় মিলিত হন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ছবিতে দেখা গেছে- এ সময় ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। বিশ্লেষকরা বলছেন, তার এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করা।
ট্রাম্প প্রশাসন এই সফরকে ব্যবহার করতে চায় বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার এক অনন্য সুযোগ হিসেবে।
তিনি নিজেও এটিকে কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং একটি কূটনৈতিক ও ব্যবসায়িক ‘মেগা ডিল’-এর সফর হিসেবে বিবেচনা করছেন।
বিপরীতে সৌদি আরব চায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা চুক্তি- যা দেশটির আঞ্চলিক অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে।
এর পাশাপাশি তারা বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতে মার্কিন সহায়তা কামনা করছে, যদিও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।
তবে রিয়াদ স্পষ্ট করে জানিয়েছে- এই প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করলে তারা মার্কিন কোম্পানিগুলোকেই এ সংক্রান্ত কাজে সংযুক্ত হতে অগ্রাধিকার দেবে।
সৌদি আরব এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- এই বিনিয়োগ তহবিলকে তারা এক ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত নিয়ে যেতে আগ্রহী।
যদিও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও আসেনি। ট্রাম্পের সফর চলাকালেই অনেক কিছু চূড়ান্ত হতে পারে।