মেলবোর্ন, ১৭ মে— ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামাসকে পরাজিত করা এবং গাজায় অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি বড় ধরনের আক্রমণ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা- আইডিএফ এই অভিযানের নাম দিয়েছে “অপারেশন গিডিয়ন্স রথ”।
শনিবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায়।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী তাদের হিব্রু এক্স অ্যাকাউন্টে জানিয়েছে যে তারা ‘অপারেশন গিডিয়ন্স রথ’-এর জন্য সৈন্যদের একত্রিত করেছে যাতে গাজা উপত্যকার “কৌশলগত এলাকা” দখল করা যায়।
হামাস পরিচালিত বেসামরিক প্রতিরক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছে।
দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর মার্চ মাসে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় সাহায্য অবরোধ আরোপ করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন গাজায় ‘অনেক মানুষ অনাহারে’ রয়েছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য সফরে আরব আমিরাতে গিয়ে তিনি একথা বলেন। একইসঙ্গে আমেরিকা গাজাবাসীর জন্য ‘কিছু করবে’ বলেও জানান তিনি।
এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে যে ‘হামাস আর হুমকি না হওয়া এবং আমাদের সমস্ত জিম্মিদের বাড়িতে না পাওয়া পর্যন্ত’ তারা কার্যক্রম বন্ধ করবে না। তারা গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজা উপত্যকা জুড়ে ১৫০ টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।
যুদ্ধবিরতি আলোচনা পুনরায় শুরু করতে এবং অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েল তাদের বোমাবর্ষণ তীব্র করেছে এবং সীমান্তে সাঁজোয়াবাহিনী মোতায়েন করেছে। এই অভিযান শুরু করা থেকে মনে হচ্ছে যুদ্ধ বন্ধের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ‘গিডিয়নের রথ’- একজন বাইবেলীয় যোদ্ধা। তার নাম অনুসারে এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে। এই অভিযানে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী আইডিএফকে অঞ্চল দখল ও নিয়ন্ত্রণ করতে, বেসামরিক লোকদের উপত্যকার দক্ষিণে স্থানান্তর করতে, হামাসকে আক্রমণ করতে এবং সাহায্য সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ নিতে বাধা দিতে দেখা যাবে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু চলতি মাসের শুরুতে বলেছিলেন, ইসরায়েল অঞ্চল দখল এবং ধরে রাখার জন্য ‘গাজায় তীব্র প্রবেশের’ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক উত্তেজনা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।
তিনি বলেছেন, “বোমার এই সর্বশেষ হামলা, তীব্র আক্রমণের হুমকির মধ্যে মানুষকে স্থানান্তরিত করতে বাধ্য করা, আশেপাশের এলাকাগুলোতে পদ্ধতিগত ধ্বংসযজ্ঞ এবং মানবিক সহায়তা প্রদানে অস্বীকৃতি জানানো ইঙ্গিত দেয় যে, গাজায় স্থায়ী জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং জাতিগত নির্মূলের সমতুল্য।”
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন যে পরিস্থিতি দেখে যুক্তরাষ্ট্র ‘চিন্তিত’।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে কর্মরত ব্রিটিশ পুনর্গঠনকারী সার্জন ভিক্টোরিয়া রোজ বিবিসি রেডিও ৪-এর টুডে প্রোগ্রামে বলেছেন যে, তার দল ‘ক্লান্ত’ এবং সবারই ‘যথেষ্ট পরিমাণে ওজন’ হ্রাস পেয়েছে।
‘বাচ্চারা সত্যিই রোগা। তাদের অনেকেরই বেশ গুরুতর পোড়া আঘাত রয়েছে এবং এই স্তরের অপুষ্টির কারণে তারা সংক্রমণের ঝুঁকিতে অনেক বেশি এবং তাদের আরোগ্য লাভের ক্ষমতা অনেক কম’ বলেন ওই চিকিৎসক।
সোমবার প্রকাশিত জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি মূল্যায়নে দেখা গেছে যে গাজার জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের ‘গুরুতর ঝুঁকিতে’ রয়েছে। তবুও ইসরায়েলি সরকার বারবার গাজায় খাদ্য ঘাটতির দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৩ হাজার ১১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার ২১৪ জন।