মেলবোর্ন, ১৮ মে — ২০১৬ সালে প্যারিস ফ্যাশন উইকে অংশ নিতে গিয়ে ভয়াবহ ডাকাতির শিকার হওয়া কিম কার্দাশিয়ান নয় বছর পর আদালতে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গত ১৩ মে, মঙ্গলবার প্যারিসের একটি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি জানান, কীভাবে সেই রাত তার জীবনের প্রতিটি বিশ্বাস, নিরাপত্তা ও স্মৃতিকে এক নিমিষে ছিন্ন করে দিয়েছিল।

“আমি ফ্যাশন উইকের জন্য প্যারিসে এসেছিলাম। প্যারিস আমার খুব প্রিয় একটি শহর ছিল,” নিজের বয়ান শুরু করেন কিম। “রাত ৩টা বা ৪টায় ঘুম ভেঙে গেলে আমি হাঁটতে বের হতাম। শহরের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াতাম, ছোট ছোট হোটেলে ঢুকে হট চকোলেট খেতাম—সেই সব মুহূর্ত ছিল যাদুকরী।”
কিন্তু তারপর তিনি বলেন, “ওই ট্রিপেই সব কিছু বদলে গেল।”
এ কথা বলতে গিয়েই তাঁর কণ্ঠ ভেঙে আসে। চোখের জল মুছতে মুছতে দুঃখিত বলে ক্ষমা চান। মায়ের (ক্রিস জেনার) পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় দেহরক্ষীর সাহায্যে কাঠগড়ায় ওঠেন কিম।
কাঠগড়ায় উঠে বিচারকের নির্দেশে নিজের পরিচয় দেন: “হাই, আমি কিম কার্দাশিয়ান। আমি আজ এখানে উপস্থিত থাকতে পেরে, আমার সত্য তুলে ধরতে পেরে এবং ফরাসি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাতে পেরে কৃতজ্ঞ।”
সামনে তাকিয়ে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। পাশে অনুবাদক দাঁড়িয়ে আদালতের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করছিলেন। বিচারক জানান, তাঁকে পুরো ঘটনাটি বলতে হবে। কিম তখন শুরু করেন সেই ভয়াবহ রাতের বিবরণ।
তিনি বলেন, “আমি বারবার রিসেপশনিস্টকে জিজ্ঞেস করছিলাম, ‘কি হচ্ছে? কি হচ্ছে?’ কারণ আমি জানতাম তিনি ইংরেজি জানেন।”
কিন্তু রিসেপশনিস্ট খুব শান্ত ছিলেন এবং বলেন, তিনি কিছু জানেন না।
“আর সেটাই আমাকে আরও বিভ্রান্ত করেছিল। বুঝতে পারছিলাম না, উনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা।”
রিসেপশনিস্ট ওয়াতিকি তখন আদালতের দর্শকসারিতে বসা ছিলেন, ক্রিস জেনারের ঠিক পেছনে। চেহারায় ছিল কঠিন এক বিষণ্নতা।
“এখন আমি বুঝি, উনিও আসলে সেই রাতে শকড ছিলেন। আমি যেভাবে ভুক্তভোগী, উনিও তাই। আমরা একসঙ্গেই সেই বিভীষিকা সহ্য করেছি,” বলেন কিম।
ওয়াতিকির মুখে তখনও কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না।
এই মামলায় কিম কার্দাশিয়ান প্রথমবার প্রত্যক্ষভাবে আদালতে সাক্ষ্য দিলেন। ডাকাতির ঘটনার সময় কিমের গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে কয়েক মিলিয়ন ডলারের গয়না লুট করা হয়, যার মধ্যে ছিল ৪ মিলিয়ন ইউরোর একটি আংটি। এ ঘটনার পর তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
এই মামলার শুনানি এখনো চলমান এবং আদালতের পরবর্তী কার্যক্রমে আরও গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য ও প্রমাণ উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।